সাভারে আমিনবাজার এলাকায় তুরাগ নদে নৌকা ডুবির ঘটনায় আটজন নিখোঁজ হয়। শনিবার বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চার শিশু ও এক নারীসহ মোট পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবরি দল। এ ছাড়া এ ঘটনায় বিআইডব্লিউটিএ-এর যুগ্ম পরিচালক ফজলুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া এ ঘটনায় নিহত প্রত্যেকের মৃতদেহ দাফন করার জন্য ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে প্রশাসন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। তিনি বলেন, নৌকা ডুবির ঘটনায় নিহতদের প্রত্যেকের মরদেহ দাফনে পরিবারকে ২০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে শনিবার ভোরে আমিনবাজার থেকে গাবতলী যাওয়ার বাল্কহেডের সঙ্গে সংঘর্ষে তুরাগের মাঝ নদীতে ১৮জন যাত্রী নিয়ে তলিয়ে পড়ে নৌকাটি। এখনো তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের স্বজনরা পাড়ে উৎকণ্ঠায় সময় কাটাচ্ছেন।
নিহতদের মধ্যে তিন জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন শিউলি আক্তার (২৭), রূপন (৪) ও আরমান (৩)। লাশ উদ্ধার হওয়া আরও দুই শিশুর পরিচয় জানা যায়নি।
ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবার ভোরে আমিনবাজার থেকে ১৮ জন যাত্রী নিয়ে গাবতীল উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পরে মাঝ নদীতে এসে পৌঁছালে একটি বাল্পহেডের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে যাত্রীসহ তলিয়ে যায় নৌকাটি। এর মধ্যে ১০ জন যাত্রী সাঁতরে পাড়ে উঠে এলেও বাকিরা নদীতে ডুবে গিয়ে নিখোঁজ হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস, নৌ-বাহিনী ও বিআইডব্লিউটিএ-এর উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। এর মধ্যে দুপুরের দিকে ক্রেন দিয়ে নদীতে তলিয়ে যাওয়া নৌকা উদ্ধার করা হয়।
সাঁতরে তীরে আসতে পারাদেরই একজন মনির হোসেন। তিনি জানান, নৌকায় ১৮ জন যাত্রী ছিল। তাদের মধ্যে তার পরিবারের সদস্য ৯ জন। তারা সাভারে আমিনবাজার থেকে গাবতলীতে যাচ্ছিলেন। ভোর ৫টার পর মাঝনদীতে বাল্কহেডের ধাক্কায় নৌকাটি তলিয়ে যায়। মনিরসহ চারজন সাঁতার দিয়ে পাড়ে উঠতে পারলেও তার পরিবারের পাঁচ সদস্য নিখোঁজ হয়।
‘আমি, শফিকুল, সালমান ও তামিম সাঁতার দিয়ে তীরে উঠেছি। আমাদের পরিবারের সদস্য রিপন ও জেসমিনের খোঁজ পাচ্ছি না। আমরা চারজন গাবতলী বালুমহালে কাজ করতাম।’
বালুমহালের শ্রমিক মনির আরও বলেন, ‘ভোরে কিছুটা কুয়াশা ছিল। নৌকাচালকের দেখতে মনে হয় সমস্যা হচ্ছিল। বাল্কহেডটি সরাসরি নৌকার মাঝখানে ধাক্কা দেয়। এরপরই আমাদের নৌকা উল্টে যায়।’
ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক আব্দুল হালিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। তবে নদীতে স্রোত থাকায় উদ্ধার অভিযানে বিঘ্ন ঘটে। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহগুলো নৌ পুলিশের কাছে রাখা হয়েছে। শনাক্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’
নৌ-পুলিশের পুলিশ সুপার খন্দকার ফরিদুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিআইডব্লিউটিএ এবং ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় নৌকাটি আমরা উদ্ধার করেছি। নৌকায় কোনো মরদেহ পাওয়া যায়নি।’
বিআইডব্লিউটিএ-এর যুগ্ম পরিচালক ফজলুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নৌকার চালককে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া বাল্কহেডের খোঁজও নেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় তাদের মধ্যে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ