খুলনায় চিকিৎসার নামে শিশু রোগীকে জিম্মি করে তার মায়ের সাথে শ্লীলতাহানির অভিযোগে খুলনা আবু নাসের হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শেখ নিশাত আব্দুল্লাহ ও হক নার্সিং হোমের মালিক নুরুল হক ফকিরের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
বুধবার (১ মার্চ) সোনাডাঙ্গা থানায় ভুক্তভোগী নুসরাত আরা ময়না বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলা নং-০১ (তাং ০১/০৩/২৩ইং)।
সোনাডাঙ্গা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মমতাজুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ডা. শেখ নিশাত আব্দুল্লাহ ও হক নার্সিং হোমের মালিক নুরুল হক ফকিরের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের যৌন পীড়ন ও সহায়তা করার অপরাধ এবং অঙ্গহানি করে ক্ষতিসাধন ও হুমকির অভিযোগে মামলা হয়েছে। ডা. শেখ নিশাত আব্দুল্লাহ আবু নাসের হাসপাতালের পাশাপাশি হক নার্সিং হোমে চিকিৎসা দেন।
অপরদিকে ডা. নিশাত আব্দুল্লাহ’র ওপর হামলা ও দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে খুলনায় ২৪ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করছেন চিকিৎসকরা। বুধবার সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া কর্মবিরতি চলবে বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) সকাল ৬টা পর্যন্ত।
জানা যায়, নুসরাত আরা ময়না আগুনে পুড়ে যাওয়া শিশু কন্যাকে নিয়ে আবু নাসের হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গেলে হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. নিশাত আব্দুল্লাহ শিশুটিকে ভালো চিকিৎসার জন্য খুলনার শেখপাড়ায় হক নার্সিং হোমে ভর্তি করতে বলেন। সেখানে ভর্তি হলে ১৮ জানুয়ারি শিশুটির বাম হাতের আঙ্গুলে সার্জারি করা হয়। পরে ওই ক্লিনিকেই নিয়মিত ড্রেসিং করা হয়।
কিন্তু এর মধ্যে ডা. নিশাত আব্দুল্লাহ মোবাইলে শিশুটির মাকে অনৈতিক প্রস্তাব দিতে থাকে। তাকে কয়েকদফা একাকি হক নার্সিং হোমে আসতে বলেন ওই চিকিৎসক। কিন্তু তিনি তাতে রাজি হননি। এরপর ৬ ফেব্রুয়ারি পুনরায় ড্রেসিং’র জন্য হক নার্সিং হোমে গেলে শিশুটিকে অপারেশন কক্ষে রেখে ওই চিকিৎসক তার মাকে নিজের চেম্বারে ডেকে নিয়ে যান। সেখানে তার শ্লীলতাহানি ঘটানোর এক পর্যায়ে তিনি কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন।
ভুক্তভোগী নুসরাত আরা ময়না বুধবার দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মেয়েকে জিম্মি করে তাকে অনৈতিক প্রস্তাব দেয়া হয়। জোরপূর্বক তাকে শ্লীলতাহানি করা হয়। কিন্তু তিনি রাজি না থাকায় চিকিৎসা অবহেলায় তার মেয়ের হাতের একটি আঙ্গুলের অর্ধেকাংশ নষ্ট হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তিনি তার মেয়ের সুচিকিৎসা ও তার সঙ্গে শ্লীলতাহানির বিচার দাবি করেন।
অপরদিকে ডা. নিশাত আব্দুল্লাহ’র ওপর হামলা ও দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে ২৪ ঘণ্টা কর্মবিরতি চলাকালে বুধবার সকাল থেকে খুলনার সকল সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখা বন্ধ করে দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ রোগীরা।
বিএমএ খুলনার সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম জানান, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি নগরীর শেখপাড়ায় অবস্থিত হক নার্সিং হোমে অপারেশন চলাকালে রোগীর স্বজনরা ডা. শেখ নিশাত আব্দুল্লাহকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। সাতক্ষীরা জেলা পুলিশে কর্মরত এএসআই নাঈমুজ্জামান শেখ ও তার সঙ্গীরা প্রায় এক মাস আগে অপারেশন করা রোগীর শারীরিক জটিলতার কথা বলে তাকে লাঞ্ছিত ও অপারেশন থিয়েটার ভাংচুর করে। তিনি অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতারের দাবি জানান। এএসআই নাঈমুজ্জামান শেখ ওই শিশুটির বাবা ও ভুক্তভোগী নারীর স্বামী।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন