নোয়াখালী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিবের তৃতীয় স্ত্রী দাবি করে তার বিরুদ্ধে প্রতারণা করে বিয়ের অভিযোগ করেছেন ডাক্তার সুমনা ইসলাম নামের এক নারী। আহসান হাবিব আগে দুই বিয়ের তথ্য গোপন করেছেন বলেও অভিযোগ করা হয়। এছাড়া স্ত্রীর স্বীকৃতি, সন্তানের পিতৃপরিচয় অস্বীকার করে অপপ্রচার, সামাজিকভাবে সম্মানহানির অভিযোগ করেন ডাক্তার সুমনা ইসলাম। এ অবস্থায় স্ত্রী-সন্তানের স্বীকৃতি চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তিনি।
বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন(ক্র্যাব) মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন তিনি। ডা. সুমনা ইসলাম বলেন, ‘আমি রাশিয়া থেকে এমবিবিএস পাসের পর ২০১৯ সালে পাবনা মেডিকেলে ইন্টার্নশিপ করি। ২০১৯ সালে পাবনায় থাকাকালে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও নোয়াখালী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীব(৩৮) সঙ্গে পরিচয় হয়।’
তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালের ২ মার্চ সাক্ষাৎ করে আহসান হাবীব তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কথোকথনের এক পর্যায়ে পরিবার সম্মতিতে দ্বিতীয় বিবাহের ডিভোর্সের কাগজ দেখিয়ে ২০২১ সালের ২৫ জানুয়ারি বিবাহ করি। কিন্তু আহসান হাবীব তার প্রথম বিয়ের তথ্য গোপন করেন, যা আমি জানতাম না। কিছুদিন পর আহসান হাবীবের আচার-আচরণে সন্দেহ হয়। তার বাড়িতে যেতে সে চাইলে বিভিন্ন ধরণের তালবাহানা করেন। তার নেত্রকোনার বাসভবনে আমি স্থায়ীভাবে তার সাথে বসবাস করতে চাইলে সে এটা সম্ভব না বলে জানান।’
‘পরে খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারি যে, আহসান হাবীবের পূর্বে আরও একটি বিবাহিত স্ত্রী (আরিফা পারভীন)আছে। সেখানে একটি ছেলে সন্তান এবং দ্বিতীয় স্ত্রী হুমায়রার রহমানের সঙ্গে সংসার জীবন চলমান ও দুটি সন্তান রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে আহসাব হাবীবকে জানতে চাইলে ক্ষীপ্ত হয়ে আমাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন। আমি, আমার মা ও ভাই তার গ্রামের বাড়ি গেলে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমাদের হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করেন। এঘটনায় মহাদেবপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করি। মামলার পর তিনি আরও হিংস্র হয়ে ওঠেন। পরে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর একটি অভিযোগ দিই। পরে আমার সাথে আপোষ করেন। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সংসার করার উদ্দেশ্যে মামলাটি প্রত্যাহার করি’- বলেও জানান ডা. সুমনা।
তিনি বলেন, ‘সর্বশেষ ফের সন্তান-সম্ভবা হওয়ার খবরে আহসান হাবীব আমার সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ দিতে থাকেন, না করলে আমাকে ডিভোর্স দেওয়ার হুমকি দেন। সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। তার তখনকার কর্মস্থল নেত্রকোনায় গেলে আমাকে ও আমার মাকে তালাবদ্ধ করে রাখেন। পরে পুলিশের সহায়তায় নিজেদেরকে উদ্ধার করি। ২০২২ সালের ২৭ মার্চ ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সি আর মামলা করি ‘
ডা. সুমনা দাবি করেন, ‘শুধু আমিই নই, আহসান হাবীবের বিরুদ্ধে প্রথম স্ত্রী আরিফা পারভীন বিভিন্ন সময়ে মামলা দায়ের করেছিলেন। বর্তমানে আমার ১৪ মাসের কন্যা সন্তান আছে এবং আহসান হাবীব সন্তানের পিতৃ পরিচয় ও ভরণপোষণ দিচ্ছেন না। আহসান হাবীব সামাজিকভাবে শুধুমাত্র দ্বিতীয় স্ত্রী ও সন্তানদের কথা স্বীকার করেন। তিনি বিভিন্ন সময় আমার বাসায় সন্ত্রাসী পাঠিয়ে আমাকে ও আমার সন্তানকে প্রাণনাশের চেষ্টাও করেছেন। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আমাকে ও আমার সন্তানকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে সন্ত্রাসীরা।’
তিনি বলেন, ‘আমি সংসার টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও আহসান হাবীব নানাভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছেন। আমার ডাক্তারি লাইসেন্স বাতিল করার চেষ্টায় তার বান্ধবী মালিহা মাহজাবিন নামে অজ্ঞাতনামা নারীকে দিয়ে ভিত্তিহীন ও বানোয়াট তথ্যে বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রারে আবেদন করান।’
ডা. সুমনা বলেন, ‘বাসুকা কর্পোরেশন নামে প্রতিষ্ঠান খুলে নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া উপজেলায় ৯৩টি টিউবওয়েল বসানোর কাজ প্রদান করেন আহসান হাবীব। এর সব কাগজপত্র করেন আমার নামে। যার টেন্ডার আইডি- ৫১০২৬২। দরপত্রের বিপরীতে বাসুকা কর্পোরেশন পারফরম্যান্স সিকিউরিটি বাবদ ৬ লাখ ৫৬ হাজার ৫৬৬ টাকা ব্যাংক জামানত রাখেন। জামানতকৃত টাকায় এখনও অসংগৃহীত রয়েছে। ঠিকাদারি কাজটি সম্পন্ন করার জন্য মালামাল কেনার উদ্দেশ্যে আহসান হাবীব আমার কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা বিভিন্ন সময়ে পর্যায়ক্রমে নিয়েছেন। অথচ বিল প্রদান না করে কাজটি বাতিল করে ২০২১ সালের ৯ জুন আবার দরপত্র আহবান করেন। এমন প্রতারণার বিষয়ে জানতে চাইলেও তিনি নানাভাবে হুমকি দেন। একইভাবে দ্বিতীয় স্ত্রী, শালিকা, ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের নামে ট্রেড লাইসেন্স করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজে কাজ করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমি সংসার করতে চাই। একইসঙ্গে স্ত্রীর স্বীকৃতি ও সন্তানের স্বীকৃতি চাই। তার নানামুখি অসম্মানজনক তৎপরতা বন্ধ চাই। তাই এই মিথ্যাচার ও সামাজিকভাবে সম্মানহানি থেকে রেহাই পেতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক