সোমবার, ১৮ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

চাঁদাবাজিতে ম্লান ওসমানী মেডিকেলের অর্জন

দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য নার্সের বিরুদ্ধেও আছে হয়রানির অভিযোগ

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

চাঁদাবাজিতে ম্লান ওসমানী মেডিকেলের অর্জন

চিকিৎসাসেবায় বৃহত্তর সিলেটের কোটি মানুষের বড় আশ্রয়স্থল এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। দেশের অন্যতম বৃহৎ এ হাসপাতালে গত কয়েক বছরে সেবার মান বেড়েছে কয়েক গুণ। বেড়েছে বিভিন্ন পর্যায়ের সুযোগ-সুবিধা। সেবায় সাফল্যের বিভিন্ন স্বীকৃতিও পেয়েছে হাসপাতালটি। কিন্তু এসব সাফল্য-স্বীকৃতি ম্লান হচ্ছে হাসপাতালটির নিরাপত্তারক্ষীদের বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে। এর সঙ্গে আছে দালালচক্রের দৌরাত্ম্যও। হাসপাতালের কিছু নার্সের বিরুদ্ধেও আছে হয়রানির অভিযোগ।

গত কয়েক বছরে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেবার মান ও সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে। হাসপাতালে ১০ বেডের পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ বিভাগ চালু, আউটডোর সেবা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ১০ তলা ভবন নির্মাণ, নতুন ক্যাজুয়ালটি বিভাগ চালু, জরুরি বিভাগকে নতুন রূপে সম্প্রসারণ, হাসপাতালে নতুন একটি ওয়ার্ড চালু, ক্যান্সার চিকিৎসায় অত্যাধুনিক কোবাল্ট-৬০ মেশিন স্থাপন, এইচআইভি-এইডস রোগের চিকিৎসায় বিশেষ ব্যবস্থা, শিশু ও নবজাতকের চিকিৎসায় নতুন এনআইসিইউ বিভাগ চালু, অটিজম সেল চালু, বিরল রোগ প্রজেরিয়ার চিকিৎসা, টিবি রোগীদের জন্য নতুন মেশিন স্থাপন, এআরটি সেন্টার চালু, নতুন এন্ডোক্রাইনোলজি ওয়ার্ড, বার্ন ইউনিট স্থাপনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেবার মান বাড়ানো হয়েছে; বেড়েছে সুযোগ-সুবিধাও। ২০১৪ সালে শ্রেষ্ঠ হাসপাতাল হিসেবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী পুরস্কার, জরুরি প্রসূতিসেবায় ২০১৭ সালে ইএমওসি পুরস্কার পায় ওসমানী হাসপাতাল। গত বছর বিচ্ছিন্ন অঙ্গ পুনঃস্থাপনে  সাফল্য অর্জন করে হাসপাতালটি। সাধারণ মানুষের আস্থার এ হাসপাতালটির এতসব সাফল্য নিরাপত্তারক্ষীদের বেপরোয়া চাঁদাবাজি আর দালালচক্রের দৌরাত্ম্যের কারণে ম্লান হচ্ছে। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিরাপত্তারক্ষীদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানি নামমাত্র বেতনে এসব নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ করে। ৪ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে দুই বছরের জন্য একেকজন নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ পান বলেও অভিযোগ আছে। বেতন কম হওয়ায় নিয়োগপ্রাপ্ত নিরাপত্তারক্ষীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। রোগীর স্বজনদের জিম্মি করে চাঁদাবাজিতে মেতে ওঠার অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে। সেবা নিতে আসা মানুষের অভিযোগ, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রত্যেক রোগীর সঙ্গে অন্তত একজন করে স্বজন থাকেন। বিভিন্ন প্রয়োজনে রোগীর স্বজনকে হাসপাতালের বাইরে যেতে হয়। কিন্তু পুনরায় হাসপাতালে ঢুকতে চাইলে নিরাপত্তারক্ষীকে দিতে হয় টাকা। হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডের প্রবেশপথে থাকা নিরাপত্তারক্ষীরা ২০ থেকে ৫০ টাকা করে প্রত্যেকের কাছ থেকে আদায় করেন। টাকা না দিলে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয় না। এ ছাড়া হাসপাতালে রোগীকে দেখতে আসা তার স্বজনরাও নিরাপত্তারক্ষীদের টাকা দেওয়া ছাড়া ঢুকতে পারেন না।

 অনেক সময় টাকা না দিলে নিরাপত্তারক্ষীরা রোগীর স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। সেবা নিতে আসা সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার জাকির হোসেন, সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খবির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা রোগীর সঙ্গে আছি। আমরা যখন প্রয়োজনে বাইরে যাই, ফের হাসপাতালে ঢুকতে গেলে নিরাপত্তারক্ষীদের টাকা দিতে হয়। না হলে তারা ঢুকতে দেয় না।’ এদিকে হাসপাতালে দালালচক্রের কারণেও হয়রানির শিকার হন রোগী ও স্বজনরা। শহরের বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের দালাল, এমনকি কিছু বেসরকারি ক্লিনিকের দালালও ওসমানী হাসপাতালে ঘুরঘুর করেন। নিজেদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীর পরীক্ষা করাতে কিংবা অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যেতে টানাটানি শুরু করে এসব দালাল। ক্লিনিকের দালালচক্র ওসমানীতে ভর্তি হওয়া রোগীদের আরও উন্নত সেবার লোভ দেখিয়ে বাগিয়ে নিতে তৎপর। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, ওসমানী হাসপাতালের কিছু নার্স রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এসব নার্সকে টাকা না দিলে তারা রোগীদের প্রতি মনোযোগ দেন না। অভিযোগ বিষয়ে ওসমানী হাসপাতালের উপপরিচালক দেবব্রত রায় বলেন, ‘হাসপাতালে নিরাপত্তারক্ষীদের চাঁদাবাজি ও হয়রানির বিষয়টি মিথ্যা নয়। এরা টাকা ছাড়া রোগীর স্বজনদের ঢুকতে দেয় না- এমন অভিযোগ আসে প্রায়ই। আমরা অভিযুক্তদের বরখাস্তও করি। তবে নিরাপত্তারক্ষীরা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ায় কাউকে বরখাস্ত করলে তার জায়গায় যে আসে, সেও একই কাজ করে। এদের কারণে শুধু রোগী ও স্বজনরাই নন, চিকিৎসকরাও অনেক সময় হয়রানির শিকার হন।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর