বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

আট হাজার শিক্ষার্থীর একটি লিফট

জবির ১৩তলা নতুন ভবন

রাশেদ হোসাইন, জবি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভবনে প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে একটি মাত্র লিফট। ১৩ তলা ভবনের ৯ তলা পর্যন্ত বিভিন্ন বিভাগ, দফতর, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ অফিস, পাঠাগার, শ্রেণিকক্ষ থাকলেও লিফট ওঠানামা করে ৬ তলা পর্যন্ত। ৬ তলায় উঠতে গিয়ে লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ১৫ থেকে ২০ মিনিট। প্রতিযোগিতা করে লিফটে উঠতে গিয়ে ছাত্রীদের অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সময়মতো ক্লাসে পৌঁছাতে পারেন না শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, একটি মাত্র লিফট দিয়ে ওঠানামা করতে গিয়ে ক্লাসের সময় নষ্ট হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়সূত্রে জানা, ভবনটিতে ৭টি লিফট লাগানোর জায়গা রাখা হয়েছে। লিফট লাগানো হয়েছে ৩টি। এর মধ্যে ১টি শিক্ষকদের জন্য আর ১টি শিক্ষার্থীদের জন্য। অন্যটি নষ্ট হয়ে আছে বহুদিন ধরে। ভবনটিতে ১৫টি বিভাগে ৭ হাজার ৮৮০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। এ ছাড়া পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দফতর, লাইব্রেরি, সব ডিন অফিস, পরিকল্পনা ও প্রকৌশল দফতর রয়েছে। বিভাগের মধ্যে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগে ১ হাজার ২২৩, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে ১ হাজার ২২০, মার্কেটিং বিভাগে ৭৫২, ফিন্যান্স বিভাগে ৮২৬, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট বিভাগে ৩৪২, আইন বিভাগে ৬১১, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগে ২০৫, নৃবিজ্ঞান বিভাগে ৫১৫, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ৩৮৮, ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগে ১৩১, ফার্মেসি বিভাগে ২৮৬, মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগে ৩০৮, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ৩৮৫, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগে ১১৯ ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগে রয়েছেন ১২৬ জন শিক্ষার্থী।

জানা যায়, ২০ তলাবিশিষ্ট একটি অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য ৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। ২০১৩ সালের মধ্যে ভবনটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্মাণসামগ্রীর দাম ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকায় ৬ তলা পর্যন্ত করে নির্মাণকাজ স্থগিত রাখা হয়। পরে ২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। এর থেকে প্রায় ৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয় এ ভবনটির ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের জন্য। ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ’১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ ভবনের নির্মাণকাজের জন্য সাত দফা দরপত্র আহ্বান করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর।

 কিন্তু কোনো দরপত্রেই কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়নি। সর্বশেষ ২০১৪ সালের মার্চে অষ্টম দরপত্রের মাধ্যমে দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড দেশ উন্নয়ন লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ২০১৫ সালে তারা কাজ শুরু করে এখন পর্যন্ত অষ্টম ও নবম তলার কাজ শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হস্তান্তর করেছে এবং আরও ৪ তলার ফিনিশিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী তানজিনা তানিন বলেন, ‘লিফটে ওঠার সময় অতিমাত্রায় ধাক্কাধাক্কি হয়। কোনো কারণে লিফট মিস মানেই ১০-১৫ মিনিট পিছিয়ে যাওয়া। অসুস্থ থাকলে অনেক সময় ভিড়ের কারণে লিফটে ওঠা সম্ভব হয় না।

 লিফট শুধু ৭ তলা পর্যন্ত, বাকি ৮-৯ তলা সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী সুকুমার চন্দ্র সাহা বলেন, ‘ভবনে ২টি লিফট চালু রয়েছে আর ১টি লিফট ওপরে কাজ করার জন্য লাগানো সম্ভব হচ্ছে না। বাকি লিফটগুলো লাগানোর জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি দিয়েছি।’

সর্বশেষ খবর