শনিবার, ১৩ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

নতুন যাত্রায় মোংলা বন্দর

১৯ কিলোমিটার ইনারবার ড্রেজিংয়ের কাজ আজ উদ্বোধন

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট

নতুন যাত্রায় মোংলা বন্দর

দেশের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর মোংলার সক্ষমতা দ্বিগুণ করতে বন্দর চ্যানেলের ইনারবারে ড্রেজিং শুরু হচ্ছে। ‘মোংলা বন্দর চ্যানেলের ইনারবার ড্রেজিং’ প্রকল্পের আওতায় ৭৯৪ কোটি টাকা ব্যয়ে জয়মণির ঘোল থেকে বন্দর জেটি পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার ইনারবার ড্রেজিংয়ের কাজ আজ উদ্বোধন করবেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। ইনারবারের এ ড্রেজিং শেষ হলে রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বঙ্গোপসাগরের ফেয়ারওয়ে বয়া পর্যন্ত ১৪৫ কিলোমিটার চ্যানেল দিয়ে সহজেই ২৪ ঘণ্টায় সাড়ে ৯ মিটার থেকে ১০ মিটার পর্যন্ত ড্রাফটের জাহাজ চলতে পারবে। পদ্মা সেতু চালু হলে রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে কাছের এ সমুদ্রবন্দরটি দিয়ে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের চাপ সামাল দেওয়ার পাশাপাশি মোংলা বন্দরের সক্ষমতা দ্বিগুণ হবে। মোংলা বন্দর কার্যত চট্টগ্রাম বন্দরের বিকল্প হয়ে উঠবে। সরকারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা। বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি সরদার আনসার উদ্দিন বলেন, ‘মোংলা বন্দরের প্রধান সমস্যা নাব্য সংকট। এ সংকট নিরসনের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ ইনারবার ড্রেজিং শুরু করায় তাদের ধন্যবাদ জানাই। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল বন্দরের এ ইনারবার ড্রেজিংয়ের। এ ড্রেজিং কাজ শেষ হলে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা দ্বিগুণ বাড়বে। সাধারণত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে যেসব কনটেইনারবাহী জাহাজ আসে সেগুলো পূর্ণ লোড অবস্থায় সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের। কিন্তু মোংলার বর্তমান গভীরতা ৭ মিটার। তাই নাব্য সংকটের কারণে এসব জাহাজ মোংলা বন্দরে সরাসরি প্রবেশ করতে না পারায় তা এ বন্দরে আসতেও চাইত না। ইনারবার ড্রেজিং সম্পন্ন হলে এ সংকট কেটে যাবে। পদ্মা সেতু চালু হলে রাজধানী ঢাকার সব থেকে কাছের এ সমুদ্রবন্দরটি দিয়ে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের চাপ বাড়বে। পাশাপাশি মোংলা বন্দরের সক্ষমতা দ্বিগুণ হবে।’ মোংলা বন্দরের ইনারবার ড্রেজিং প্রকল্প পরিচালক (পিডি) শেখ শওকত আলী জানান, রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বঙ্গোপসাগরের ফেয়ারওয়ে বয়া পর্যন্ত মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের দৈর্ঘ্য ১৪৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে মোংলা বন্দর জেটি থেকে হারবাড়িয়া (জয়মণির ঘোল) পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার ইনারবার চ্যানেলের বর্তমান গভীরতা ৫ দশমিক ৫ মিটারেরও কম। এ গভীরতায় জোয়ারের পানির উচ্চতার সুবিধা নিয়ে সর্বোচ্চ ৭ থেকে সাড়ে ৭ মিটার ড্রাফটের জাহাজ জেটিতে আসতে পারে। বড় বড় বাণিজ্যিক জাহাজ তথা সাড়ে ৯ মিটার থেকে ১০ মিটার পর্যন্ত ড্রাফটের জাহাজ বন্দরের ইনারবার দিয়ে চলতে না পারায় বিষয়টি ভাবিয়ে তোলে কর্তৃপক্ষকে। এ অবস্থায় ২০১৮ সালে খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষার পর মোংলা বন্দরের সক্ষমতা দ্বিগুণ করতে প্রায় ৭৯৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘মোংলা বন্দর চ্যানেলের ইনারবার ড্রেজিং’ প্রকল্প নিয়েছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পটি একনেকে পাস হওয়ার পর ঠিকাদার হিসেবে কাজ পায় চীনা কোম্পানি জেএইচসিইসি ও সিসিইসিসি। এ ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২২ সালে।

প্রকল্প পরিচালক আরও জানান, এ ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ সুষ্ঠুভাবে করতে ইনারবার ড্রেজিংয়ের উত্তোলিত ২১৬.০৯ লাখ ঘনমিটার পলিমাটি ও বালু ফেলার জন্য ১ হাজার ৫০০ একর জমির দরকার হবে। পশুর নদের তীরবর্তী অল্প গভীরতাসম্পন্ন প্রায় ৫০০ একর জমিতে জিওটেক্সটাইল টিউব দিয়ে ডাইক নির্মাণ করে সেখানেই এসব মাটি ফেলা হবে। পরে প্রয়োজনে মাটি ফেলার জন্য আরও জমি প্রস্তুত করা হবে। ইনারবার ড্রেজিংয়ের কাজ শেষ হলে সাড়ে ৯ মিটার থেকে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ মোংলা বন্দর জেটিতে সরাসরি নোঙর করতে পারবে। এর আগে মোংলা আউটারবারও ড্রেজিং করা হয়েছে। যার সুফল বন্দর ব্যবহারকারীরা ইতিমধ্যে পেতে শুরু করেছেন। এখন আগের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ জাহাজ আগমন বৃদ্ধি পেয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর