বুধবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা
মিতু হত্যাকান্ড

বাবুল-গায়ত্রীর হাতের লেখায় আলো দেখছে পিবিআই

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আকতারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার তদন্তে আলো দেখাচ্ছে গায়ত্রী অমর শিং-এর পাঠানো এসএমএস, বাবুল-গায়ত্রীর চিরকুট এবং ভোলাসহ তিনজনের জবানবন্দি। বাবুল-গায়ত্রীর চিরকুট এবং ছেলের আর্ট পেপারে লিখে যাওয়া কিছু ডকুমেন্টকেও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে এগোচ্ছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এসব ডকুমেন্টের সত্যতা যাছাইয়ে বিশেযজ্ঞ মতামত চাইবে পিবিআই। তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইর পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ‘বাবুল আকতার ও গায়ত্রীর হাতের লেখা কিছু ডকুমেন্ট আমাদের হাতে এসেছে। এ ছাড়া খুনের শিকার মিতুর হাতে লেখা কিছু ডকুমেন্টও পেয়েছি। এ ডকুমেন্টগুলোর সত্যতা যাছাইয়ের জন্য সিআইডির কাছে পাঠানো হবে।’ মামলার বাদী ও মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘মিতু, বাবুল আকতার ও পরকীয়া প্রেমিকা গায়ত্রী অমর শিংয়ের হাতের লেখা কিছু ডকুমেন্ট তদন্তকারী সংস্থাকে সরবরাহ করা হয়েছে।

এ ডকুমেন্টগুলো পর্যালোচনা করলে বোঝা যাবে বাবুল আকতার কী কারণে মিতুকে খুন করেছে।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘বাবুল আকতারকে রক্ষার জন্য একটি বড় গ্রুপ মাঠে নেমেছে। তারা নানান ষড়যন্ত্র করে বাবুলকে রক্ষার চেষ্টা করছে।’

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, বাবুল এবং গায়ত্রীর হাতের লেখা ডকুমেন্টগুলো এ মামলার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া ছেলের আর্ট পেপার ও প্যাডে লেখে যাওয়া মিতু চিরকুটও এ মামলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ আলামতগুলো পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় এ খুনের সঙ্গে বাবুলই জড়িত।

জানা যায়, আলোচিত মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার তদন্তে আলো দেখাচ্ছে গায়ত্রী অমর শিংয়ের পাঠানো এসএমএস, ‘তালিবান’ এবং ‘বেস্ট কিপ্ট সিক্রেট’ বইয়ে বাবুল আক্তার এবং গায়ত্রীর চিরকুট এবং আদালতে দেওয়া তিনজনের জবানবন্দি। এরই মধ্যে বাবুলের কথিত প্রেমিকা ইউএনএইচসিআর কর্মকর্তা গায়ত্রীর ২৬টি এসএমএস পিবিআইর হাতে এসেছে। ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত এসএমএসগুলো বাবুল আকতারের ব্যক্তিগত মোবাইলে পাঠান গায়ত্রী। বাবুল তখন মিশনে থাকলেও মোবাইল চালু ছিল। গায়ত্রীর মোবাইল থেকে আসা এসএমএসগুলো প্যাড এবং ছেলের আর্ট পেপারে লিখে সংরক্ষণ করেন মিতু। যা পরবর্তিতে পিবিআইর কাছে হস্তান্তর করেছে মিতুর বাবা। বাবুলকে উপহার দেওয়া ‘তালিবান’ এবং ‘বেস্ট কিপ্ট সিক্রেট’ বইতেই পরকীয়ার বিষয়ে নানান তথ্য লিখেন গায়ত্রী এবং বাবুল আকতার। এ ছাড়া মিতু হত্যা মামলার অন্যতম আসামি কামরুল ইসলাম সিকদার ওরফে মুছার স্ত্রী পান্না আকতার, এহতেশামুল হক ভোলা এবং বাবুলের ব্যবসায়িক পার্টনার সাইফুলের কর্মচারী মোখলেসুর রহমান ইরাদের জবানবন্দিতেও উঠে এসেছে বাবুল আকতারের সম্পৃক্ততার কথা।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৫ জুন নগরীর জিইসির মোড় এলাকায় ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে খুন হন সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনায় বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। খুনের পাঁচ বছর পর পিবিআইর তদন্তে এ খুনের সঙ্গে বাবুল আকতারের সংশ্লিষ্টতা পায়। পরে পুরনো মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে নতুন করে মামলা দায়ের করা হয়। যাতে আসামি করা হয় বাবুল আকতারসহ আটজনকে। ওই মামলায় গ্রেফতার হয়ে বাবুল বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

সর্বশেষ খবর