বুধবার, ২৯ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা
বরিশাল পোর্ট রোড মোকাম

ট্রাকে ট্রাকে আসছে ইলিশ

রাহাত খান, বরিশাল

ট্রাকে ট্রাকে আসছে ইলিশ

ইলিশের নিরাপদ প্রজননের জন্য ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত দেশের সমুদ্রসীমায় মাছ ধরা নিষিদ্ধ। এই সময়ে সমুদ্রে সব ধরনের মাছ আহরণ, পরিবহন, সংরক্ষণ ও ক্রয়-বিক্রয় আইনত দন্ডনীয়। কাগজে-কলমে এই আইন থাকলেও বরিশালের পোর্টরোড মোকামে অবাধে চলছে সামুদ্রিক ইলিশসহ অন্যান্য মাছের কেনাবেচা। ভোলার চরমোস্তাজ এবং পাথরঘাটা উপকূল থেকে শিকার করা ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ ট্রাকে ট্রাকে আনা হচ্ছে পোর্ট রোড আড়তে। এখান থেকে পাইকারি ইলিশ কিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করছে ব্যাপারীরা। সকাল থেকে দুপুর অবধি পোর্ট রোডে প্রকাশ্যে সামুদ্রিক মাছ বিক্রি হলেও মৎস্য বিভাগ কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একেবারেই নিশ্চুপ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যোগসাজশে উপকূলে শিকার করা কিছু সামুদ্রিক মাছ বরিশালের বাজারে আসছে বলে স্বীকার করেছেন বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য কর্মকর্তা। ৬৫ দিনের জন্য সামুদ্রিক মাছ ধরা, সংরক্ষণ, পরিবহন এবং ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ হলেও প্রতিদিন ট্রাকে করে ১৫০ থেকে ২০০ মণ সামুদ্রিক ইলিশ আসছে বরিশাল পোর্ট রোড মোকামে। স্থানীয় নদ-নদী থেকে আহরিত ৪০ থেকে ৫০ মণ ইলিশ প্রতিদিন আসছে মোকামে। গতকাল পাইকারি বাজারে স্থানীয় নদীর ১ কেজি ২০০ গ্রাম বা তদূর্ধ্ব সাইজের এক মণ ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৬০ হাজার টাকায়। কেজি সাইজ প্রতি মণ ৫৫ হাজার, রপ্তানিযোগ্য (৬০০ গ্রাম থেকে ৯০০ গ্রাম) এলসি সাইজ ৪৪ হাজার, ভেলকা সাইজ (৪০০ থেকে ৫৫০ গ্রাম) ৩৪ হাজার এবং গোটলা সাইজ (২৫০ গ্রাম থেকে ৩৫০ গ্রাম) প্রতি মণ ইলিশ বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ২৭ হাজার টাকায়। এদিকে প্রকাশ্য ডাকে গতকাল পোর্ট রোডে কেজি থেকে তদূর্ধ্ব সাইজের প্রতি মণ সামুদ্রিক ইলিশ ৩৮ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকায় এবং এর ছোট সাইজের লট বিক্রি হয়েছে ২৭ থেকে ২৮ হাজার টাকা মণ দরে।

ইলিশ বিক্রেতারা জানান, স্থানীয় নদ-নদীতে ইলিশ ধরা পড়ছে কম। প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ মণ নদীর ইলিশ আসছে মোকামে। অপরদিকে প্রতিদিন সামুদ্রিক ইলিশ আসছে ১৫০ থেকে ২০০ মণ। ভোলার চরমোস্তাজ, পটুয়াখালীর চলতাপলী এবং বরগুনার পাথরঘাটা থেকে ট্রাকে ট্রাকে সমুদ্রে আহরিত ইলিশ আসছে পোর্ট রোডে। মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির বর্তমান দুই নেতা এবং প্রয়াত এক সাবেক সভাপতির ছেলে সামুদ্রিক এই ইলিশ মোকামে আনেন বলে জানিয়েছেন তাদের কাছ থেকে মাছ কেনা ব্যাপারীরা। ব্যস্ততম পাইকারি বাজারে ট্রাক ঢুকিয়ে খালাস করা হয় সামুদ্রিক ইলিশ। বাজারের মধ্যে ট্রাক ঢুকানোয় পাইকার-ক্রেতা-বিক্রেতা চলাচলে সমস্যা হলেও তারা প্রভাবশালী হওয়ায় টুঁ শব্দ করে না কেউ।

আড়তদাররা জানান, বাজারে আসা এসব ইলিশ সমুদ্র মোহনার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং মৎস্য বিভাগের যোগসাজশে সাগর মোহনায় শিকার করা মাছ বরিশাল মোকামে আসছে। পরে সাইজ ভেদে প্রকাশ্য ডাকে লট বিক্রি করেন তারা।

বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. আনিচুর রহমান তালুকদার বলেন, সাগর উপকূলে শিকার করা ইলিশসহ কিছু মাছ বাজারে আসছে বলে তিনি শুনেছেন। সবাই ভালো হলে তো দেশটা আরও এগিয়ে যেত। মৎস্য বিভাগের লোকবল স্বল্পতা রয়েছে। কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ এবং নৌবাহিনীর কতিপয় সদস্যের যোগসাজশে সাগর মোহনায় ইলিশ শিকার এবং পরিবহন করা হচ্ছে। মৎস্য বিভাগ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন-উল আহসান বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যোগসাজশে সাগরে মাছ ধরার বিষয়টি সঠিক নয়। তারা বরং সহযোগিতা করে যাতে সাগরে মাছ না ধরে। বিশাল কোস্টাল এরিয়া। সব জায়গায় আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেতে পারে কিনা জানি না। বিষয়টি নজরদারি করবেন তিনি।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর