শুক্রবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

সিলেটে বাড়ছে নারীর প্রতি সহিংসতা

তুচ্ছ ঘটনায় খুনোখুনি, বেশি নির্যাতনের শিকার পরিবারে

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটে বাড়ছে নারীর প্রতি সহিংসতা

সিলেটে বেড়েই চলছে নারীর প্রতি সহিংসতা। তুচ্ছ ঘটনায় আক্রমণের শিকার হচ্ছেন নারীরা। অনেক সময় প্রাণও দিতে হচ্ছে তাদেরকে। তবে নারীরা সবচেয়ে বেশি সহিংসতার শিকার হচ্ছেন পরিবারে। পারিবারিক বিরোধ, দাম্পত্য কলহ ও যৌতুকের কারণে তাদের ওপর নেমে আসে নির্যাতন। দেশে নারীর ক্ষমতায়ন বাড়লেও সামাজিক ও পারিবারিক মানসিকতার উন্নতি না হওয়ায় সহিংসতা কমছে না বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা।

সিলেট বিভাগে গেল এক বছরে সহিংসতার শিকার হয়ে প্রাণ দিয়েছেন ২৮ জন নারী। এর আগের বছর খুন হয়েছিলেন ১০ জন। পরিসংখ্যান ঘেটে দেখা গেছে, ২০২২ সালে যে ১৮ জন নারী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন এর মধ্যে ১১ জনই খুন হয়েছেন স্বামীর হাতে। আর সন্তানের হাতে খুন হয়েছেন দুজন। বাকি ১৫ জনের মধ্যে পাঁচজনকে হত্যা করা হয়েছে জবাই করে। বিদায়ী বছরে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া ২৮ জনের মধ্যে সিলেটের ১০ জন, সুনামগঞ্জের ১১ জন, হবিগঞ্জের ছয়জন ও মৌলভীবাজারের একজন নারী ছিলেন।

নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে জাতীয় মহিলা সংস্থা সিলেট জেলার চেয়ারম্যান হেলেন আহমদ বলেন, ‘সামাজিক সচেতনতা ছাড়া এই সহিংসতা বন্ধ করা সম্ভব নয়। আমাদের সমাজ এখনো পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব পোষণ করে। এটার পরিবর্তন করা গেলে নারীরা নিরাপদ জীবন লাভ করবে।’ সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট রাশিদা সাঈদা খানম বলেন, ‘পারিবারিক কলহের কারণে বেশির ভাগ নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। এর জন্য সামাজিক ও পারিবারিক অবক্ষয়ই বেশি দায়ী। প্রকৃতপক্ষে দেশে নারীর ক্ষমতায়ন বাড়লেও সামাজিক ও পারিবারিকভাবে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটছে না। এ জন্য প্রয়োজন সচেতনতা ও নারীর প্রতি সম্মান-শ্রদ্ধাবোধ মনোভাব।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৩ জানুয়ারি সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার উত্তর মহাইল গ্রামে ছেলে আবুল হাসনাতের হাতে খুন হন মা আয়নব বিবি। ২৫ জানুয়ারি দক্ষিণ সুরমা উপজেলার জালালপুরের হাসামপুরে স্বামীর বাড়ির লোকজনের নির্যাতনে প্রাণ হারান শিল্পী বেগম। ১ ফেব্রুয়ারি নবীগঞ্জের রসুলগঞ্জে স্বামী জাকারিয়া গলা কেটে খুন করেন তরুণী গৃহবধূ রাজনা বেগমকে। ৭ ফেব্রুয়ারি দোয়ারাবাজারে ঝগড়া থামাতে গিয়ে মারা যান গোলেস্তা বেগম নামের এক বৃদ্ধা। ১৭ ফেব্রুয়ারি জগন্নাথপুর পৌর পয়েন্টের অভি ফার্মেসিতে শাহনাজ পারভীন নামের এক প্রবাসীর স্ত্রীকে খুন করে লাশ ছয় টুকরা করে ঘাতকরা। ১৮ ফেব্রুয়ারি গোলাপগঞ্জে মুখে বিষ ঢেলে খুন করা হয় রোমানা আক্তার রিনি নামের এক গৃহবধূকে। ৬ মার্চ সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার তেঘরিয়ায় পারিবারিক কলহের জের ধরে স্বামীর হাতে রিপা বেগম, ১৫ মার্চ দোয়ারাবাজারের আমবাড়িতে স্বামী আসকর আলীর লাথিতে রিনা বেগম খুন হন। ২১ মার্চ শায়েস্তাগঞ্জের পূর্ব বাগুনীপাড়ায় ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হন রিনা বেগম নামের আরেক গৃহবধূ। ১৬ এপ্রিল জগন্নাথপুরের পাটকুরায় স্কুলশিক্ষক মৃদুল চন্দ্র সরকারের নির্যাতনে প্রাণ হারান স্ত্রী ছন্দা রানী সরকার। ২৭ এপ্রিল কোম্পানীগঞ্জের চাতলপাড় গ্রামের ইদ্রিস আলীর হাতে খুন হন স্ত্রী হামিদা বেগম। ১৩ মে জামালগঞ্জের চানবাড়িতে দেবরের দায়ের কোপে খুন হন গৃহবধূ সুলেখা বেগম। ৩০ এপ্রিল সিলেট শহরতলির মইয়ারচরে স্বামীর বাড়িতে খুন হন নাজমিন আক্তার। ২৫ জুন গোলাপগঞ্জের এখলাছপুরে ইটের আঘাতে মারা যান বৃদ্ধা হাওয়ারুন বেগম। ১৫ জুলাই প্রতিপক্ষের সঙ্গে মারামারির সময় ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে খুন হন মা হাসিনা বেগম। ১৮ জুলাই মাধবপুরে চার সন্তানের জননী নেভি আক্তার খুন হন স্বামীর হাতে। একই দিন শান্তিগঞ্জের ঘোড়াডুম্বুর গ্রামে স্বামীর হাতে প্রাণ দেন মাসুমা বেগম।

৩০ জুলাই মধ্যনগরে স্বামী আবেল সাংমা পিটিয়ে খুন করে স্ত্রী রুজানি দাজেলকে। ৫ আগস্ট চুনারুঘাটের সাতছড়ির গারোটিলায় ছেলের হাতে খুন হন মা সঞ্জিলা সাংমা। ২৪ আগস্ট সিলেট নগরীর বালুচর থেকে তালাবদ্ধ অবস্থায় আফিয়া বেগম নামের এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করা হয়। ৯ সেপ্টেম্বর রাজনগরে মিনা বেগম, ১৬ সেপ্টেম্বর চুনারুঘাটে পলি আক্তার, ১৮ সেপ্টেম্বর জগন্নাথপুরে আছিয়া বেগম, ৯ নভেম্বর কানাইঘাটে রাশিদা বেগম, একই দিন নবীগঞ্জের চরগাঁওয়ে তহুরা বেগম, ছাতকের জাউয়াবাজারে আলেখা বেগম ও ১২ ডিসেম্বর গোয়াইনঘাটের জাফলংয়ে অজ্ঞাত নারী ও একই দিন দিরাইয়ে আয়েশা বেগম নামের এক গৃহবধূ হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এসব ঘটনার বেশির ভাগই পরিবারের সদস্যদের হাতে ঘটেছে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর