বিলুপ্তপ্রায় এক পাখির নাম কালাঘাড় রাজন। দেহের গড়ন বেশ ছোট। দেখতে অনন্যসুন্দর। মেয়ে পাখিটি হালকা নীল রঙের এবং ছেলে পাখিটির রং একটু গাঢ় নীল। পাখিটির শরীরের রং প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে থাকে। এটির ইংরেজি নাম মনার্ক অর্থাৎ রাজন-রাজা, রাজন্য ইত্যাদি। নামের মতোই পাখিটির মধ্যে রয়েছে রাজকীয় ভাব। পাখিটির ছোট্ট মাথার টিকিতে রয়েছে রাজার মুকুটের মতো ঊর্ধ্বমুখী উঁচু ও কালো লোম। একসময় গ্রামগঞ্জে পাখিটি প্রচুর দেখা গেলেও এখন খুব একটা দেখা যায় না। সম্প্রতি কুড়িগ্রামের রাজারহাট থেকে বাচ্চাসহ দুর্লভ এ কালাঘাড় রাজন পাখির ছবি তুলেছেন ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার রানা মাসুদ। তিনি রংপুরের বিশিষ্ট লেখক-কবি। তিনি জানান, ছবির পাখিটি পুরুষ রাজন। এতে দেখেন, রাজন পাখিটির মধ্যে পিতৃত্বের দায়বোধ স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। পুরুষ রাজনকে (বাবা) দেখে ছোট ছানাগুলো মুখ তুলে কী যেন চাচ্ছে; ছবিতে এমনটাই বোঝা যাচ্ছে। মানবসমাজে সন্তান বড় না হওয়া পর্যন্ত বাবা-মায়ের যেমন দায়িত্ব থাকে তাদের খাদ্য-বাসস্থানসহ আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। পাখির ক্ষেত্রেও তা-ই। এটি জীবজগতের সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
ছবির কারিগর বলেন, ছবিটি তোলার সময় মনে হয়েছিল বাবাকে দেখেই ছোট ছানাদের চিঁচিঁ শব্দে চিৎকার করে বলছে, ‘আমাদের খিদে পেয়েছে, খাবার দাও। আমাদের খাবার আনোনি ক্যানো?’ মলিন মুখে বাবাটা যেন বলছে, ‘ওরে, তোদের খাবারের জন্য যে একটু পোকামাকড় ধরে আনতাম, তা তো এখন পাই-ই না। সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ নামের এক উন্নত প্রাণী তাদের খাবারের জন্য কীটনাশক দিয়ে ফসলের খেতের সব পোকামাকড় মেরে ফেলছে। আমাদের কথা তাদের ভাবনায় নেই।’ তিনি জানান, বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে যখন কীটপতঙ্গ অনেক বেশি হয়, তখন ডিমে তা দিয়ে ছানা ফোটায় এরা। প্রজনন মৌসুমে ছোট ছোট কাঠি, শুকনো লতাপাতা ঠোঁটে করে এনে মাকড়সার জাল দিয়ে বেঁধে বেঁধে বাসার দেয়ালটা গোল-মোটা বাটির মতো করে বানায়।
পাখিটা ছোট, কিন্তু ওর বাসার দেয়ালটা মোটা করে তৈরি করে। তিনটি ডিম দিলেই বাসাটা ভরে যায়। পাখিটা তা দেয় বাসার ওপরে বসে। ওপরে বসে তা দিলে কেবল ওপরের ডিমেই তা লাগার কথা। তবে বাসা তৈরির বিশেষ কৌশলের কারণে নিচের ডিমেও উত্তাপ লাগে। কালাঘাড় রাজন ফসলের মাঠ ও বনের ভিতরে উড়ে বেড়ানো পতঙ্গ ধরে খায়। ঘন ডালপালার ভিতর দিয়ে অনায়াসে দ্রুত ছুটতে পারে। পাখিটির দৈর্ঘ্য মাত্র ১৬ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। ওজন ১২/১৪ গ্রাম পর্যন্ত। পাখিটি বিপদগ্রস্ত হিসেবে তালিকাভুক্ত।