রাজধানীর উত্তরায় সাতসকালে ফিল্মি স্টাইলে মোবাইলে আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান নগদ এজেন্টের ১ কোটি ৮ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ছিনতাই হয়েছে। গতকাল সকাল ৮টায় অস্ত্রধারীরা র্যাব পরিচয়ে ১৩ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর সড়কে নগদের কর্মচারীদের জিম্মি করে টাকাভর্তি ব্যাগ লুটে নিয়ে যান।
পুলিশ জানায়, র্যাবের পোশাক পরিহিত ও পরিচয়ে কালো মাইক্রোবাসে করে এসে আকস্মিকভাবে দুটি মোটরসাইকেলের চারজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করেন দুর্বৃত্তরা। ভুক্তভোগীরা নগদ এজেন্টের নিকটস্থ বাসা থেকে টাকা বহন করে ডিস্ট্রিবিউটর কার্যালয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তাদের মধ্যে তিনজনকে ওই মোটা অঙ্কের টাকাভর্তি ব্যাগসহ জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নেন। ছিনতাইকারীরা টাকাগুলো রেখে অস্ত্রের মুখে জিম্মির শিকার ব্যক্তিদের উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরে ফেলে চলে যান। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করে।
পুলিশ এ ঘটনায় ব্যবহৃত মাইক্রোবাসের নম্বর এবং আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করছে বলে জানা গেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, উত্তরা-১৩ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ৩৭ বাসাটি হলো স্থানীয় ডিস্ট্রিবিউটর আবদুল খালেক নয়নের। সেখান থেকে হেঁটে পাঁচ মিনিট দূরত্বেই নগদের ডিস্ট্রিবিউটিং অফিস। নয়নের বাসায় ছিল টাকাগুলো। সেখান থেকে ডিস্ট্রিবিউটর অফিসের চারজন মোটরসাইকেলে ওই টাকা আনছিলেন। মোড়েই একটি হাইয়েস গাড়ি নিয়ে ওত পেতে ছিলেন ছিনতাইকারীরা। র্যাবের পোশাক পরিহিত কয়েকজন তাদের অস্ত্রের মুখে গতিরোধ করেন। চারজনের মধ্যে কাউসার, লিয়াকত ও আবদুর রহমানকে পিস্তল দেখিয়ে জিম্মি করে টাকার ব্যাগসহ হাইয়েস গাড়িতে ওঠানো হয়। অন্যদিকে ওমর হোসেন এক লাখের কিছু বেশি টাকার আরেকটি ব্যাগসহ দৌড়ে পালাতে সক্ষম হন। এরপর ছিনতাইকারীরা নগদের প্রতিনিধিদের উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরে ফেলে রেখে চলে যান। তিনি বলেন, ঘটনার প্রত্যক্ষ চারজনকে থানা হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ছিনতাই হওয়া টাকার পরিমাণ সম্পর্কে তারা জানিয়েছেন, দুটি মোটরসাইকেলে করে টাকা আনা হচ্ছিল। এক মোটরসাইকেলে ছিল ১ কোটি ৮ লাখ ৪২ হাজার। তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, জিজ্ঞাসাবাদে জিম্মিদশা থেকে মুক্ত তিনজন জানিয়েছেন, তাদের চড়-থাপ্পড় মারা হয়েছে। কিন্তু কেন নগদের ডিস্ট্রিবিউটর নয়নের বাসায় টাকাগুলো রাখা হয়েছিল? বন্ধের দিনে এত সকালে এতগুলা টাকা কেন বাসা থেকে অফিসে নেওয়া হচ্ছিল? এসব প্রশ্নের জবাব জানার চেষ্টা চলছে। দুটি মোটরসাইকেল ব্যবহার করে আলাদাভাবে টাকা বহন করা হচ্ছিল জানালেও একটি মোটরসাইকেলে ছিল ১ কোটি ৮ লাখ টাকা। সেটাই টার্গেট করাটা সন্দেহজনক। অনেক সময় ভিতরেই ইনফর্মার থাকে। তবে ক্লু পেতে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এদিকে সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা গেছে, মোটরসাইকেলে করে দুই ব্যক্তি ব্যাগ নিয়ে যাওয়ার পথে কালো একটি মাইক্রোবাস উল্টোপাশ থেকে এসে তাদের গতিরোধ করে। এ সময় মোটরসাইকেলের পেছনে বসা ব্যক্তি ব্যাগটি নিয়ে দৌড় দেন। এরপর র্যাবের জ্যাকেট (কোটি) পরা লোকেরা দৌড়ে তাকে ধরে ফেলেন। এ সময় ছিনতাইকারীদের হাতে ছোট আগ্নেয়াস্ত্র দেখা যায়। এদিন দুপুরে র্যাব-১ এর কার্যালয়ে সাংবাদিকরা ওই ছিনতাইয়ের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যদি র্যাবের কেউ হন সে-ও ছাড়া পাবে না। অনেক সময় র্যাব-পুলিশের পোশাক পরে অনেকে অনেক অপকর্ম করছে তারাও পার পাবে না।