ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় দৃষ্টিনন্দন আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম পরিবেশবান্ধব ‘চরফ্যাশন কেন্দ্রীয় খাসমহল মসজিদ’-এর শুভ উদ্বোধন করেছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আলহাজ আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এমপি।
তিনি গতকাল প্রায় সহস্রাধিক আলেম, ওলামা ও মুসল্লির উপস্থিতিতে জুমার নামাজ আদায় করেন এবং নামাজ শেষে এ মসজিদের উদ্বোধন করেন। তিনি মুসল্লিদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমার জীবনে স্বপ্ন ছিল একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ নির্মাণের। আজ আমার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হওয়ায় মহান আল্লাহর কাছে লাখো শুকরিয়া আদায় করছি।’
প্রসঙ্গত, ভূগর্ভস্থ ফ্লোরসহ চার তলাবিশিষ্ট এ মসজিদের আয়তন ৫৩ হাজার ২০০ বর্গফুট। এ মসজিদে একসঙ্গে সাড়ে ৪ হাজার মুসল্লির নামাজের সুব্যবস্থা রয়েছে। মহিলাদের জন্য আলাদা প্রবেশ পথ এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ৫০০ জনের নামাজেরও সুব্যবস্থা রয়েছে। এটি বাংলাদেশে নির্মিত সর্বপ্রথম গ্লাস গম্বুজ মসজিদ। এখানে দিনের স্বচ্ছ আলোতে নামাজ পড়া যায়। ফলে দিনের বেলায় কোনো বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানোর প্রয়োজন হবে না।
সরেজমিন দেখা গেছে, মসজিদের বাইরে শ্বেত পাথরের দীর্ঘ লম্বা সুউচ্চ ধাপের সিঁড়ি মুসল্লিদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করছে। মসজিদের প্রতিটি তলা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অনবদ্য প্রয়াস অবাক করার মতো। মসজিদের পাশে অবস্থিত জ্যাকব টাওয়ারের চূড়ায় লাগানো মাইকে যখন আজানের সুমধুর ধ্বনি শোনা যায়, তখন দূর-দূরান্তের মুসল্লিদের মাঝে অন্যরকম আবেগ তৈরি হয়। শৈল্পিক ও দৃষ্টিনন্দন কারুকার্যের এ মসজিদ বাংলাদেশে বিরল। উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় সুউচ্চ ‘জ্যাকব টাওয়ার’-এর পাশে অবস্থিত এ মসজিদ। পরিবেশ সুরক্ষা ও আবহাওয়া উপযোগী করে উপকূলীয় এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি। মসজিদের দেয়ালে সিরামিক ইটের নিপুণ গাঁথুনির মধ্য দিয়ে প্রবেশ করছে প্রকৃতির নির্মল বাতাস। বাংলাদেশের প্রথম গ্লাস গম্বুজ মসজিদ এটি। কাচের গ্লাস গম্বুজ ভেদ করে দিনের আলো মসজিদের ভিতরে ছড়াচ্ছে। মসজিদের ভিতর-বাইরে রয়েছে নান্দনিক রং-বেরঙের এলইডি লাইটের আলোকরশ্মি। প্রকৃতিবান্ধব নির্মাণশৈলীর এ মসজিদ ধর্মপ্রাণ মানুষকে আরাম আয়াসে ইবাদতে আকৃষ্ট করবে।
চরফ্যাশন পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসান জানান, ২০১৮ সালে মসজিদের প্রথম নির্মাণকাজ শুরু হয়। মসজিদ নির্মাণে জাতীয় সংসদ ভবনে ব্যবহৃত উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সাদা ফেয়ার ফেস সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদে সাদা ফেয়ার ফেস পলেস্তার আবরণ রয়েছে, যার স্থায়িত্ব হবে প্রায় শত বছর। নান্দনিক সৌন্দর্যবর্ধনে রয়েছে ফোয়ারা আর দৃষ্টিনন্দন ফুলের বাগান। রয়েছে বিভিন্ন রঙের লাইটিং ব্যবস্থা। মসজিদের বাইরে সিরামিক ইটের গাঁথুনিতে সাজানো চত্বরটিও প্রাণ জুড়িয়ে যাওয়ার মতো। বাংলাদেশের খ্যাতিমান ডিজাইনার ভোলার কৃতিসন্তান স্থপতি কামরুজ্জামান লিটনের শিল্প সৌকর্যের অপরূপ স্থাপনা এটি।
