রবিবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা
বঙ্গবন্ধু টানেল

চলছে উদ্বোধনের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

চলছে উদ্বোধনের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে নদীর তলদেশে টানেল যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আগামী ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ যান চলাচলের জন্য আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনের পরের দিনই টানেল সাধারণ যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

টানেলের কারণে দেশের যোগাযোগ খাতে পদ্মা সেতুর পর দ্বিতীয় বিপ্লব ঘটতে যাচ্ছে। টানেল ঘিরে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বিস্তৃতি হওয়ার পাশাপাশি বিকাশিত হবে পর্যটন শিল্পও। বাড়বে বিদেশি বিনিয়োগ। টানেল চালু হওয়ার কারণে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হবে শূন্য দশমিক ১৬৬ শতাংশ। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সফল করতে এখন আমাদের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। প্রতিটি সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় সভা করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয় থেকেই উদ্বোধন সংশ্লিষ্ট সব বিষয় মনিটরিং করা হচ্ছে।’ বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, ‘টানেলের আরও কোনো কাজ অবশিষ্ট নেই। এখন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ঘিরে চলছে আমাদের সব কাজ। টানেলের সাজ-সজ্জা ও সমন্বয় সভা করেই আমাদের দিন কাটছে। ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী টানেল উদ্বোধন করবেন। পরের দিন ২৯ অক্টোবর জনসাধারণের জন্য এটি পুরোদমে খুলে দেওয়া হবে।’ খোঁজ নিতে গিয়ে গতকাল জানা গেছে, টানেল তৈরির কাজ প্রায় শত ভাগ শেষ হওয়ায় এখন চলছে শেষ মুহূর্তের ফিনিশিং কাজ। কর্মকর্তা থেকে শুরু করে শ্রমিক সবাই ব্যস্ত শ্রীবর্ধনের কাজ নিয়ে। টানেল তৈরি সরাসরি নিয়োজিত শ্রমিক কর্মচারী, কর্মকর্তা ছাড়াও প্রশাসনে চলছে টানেল উদ্বোধনকে ঘিরে নানান কর্মযজ্ঞ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও জনসভার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রতিদিনই করছেন সমন্বয় সভা। বঙ্গবন্ধু টানেলকে মনে করা হচ্ছে দেশের অর্থনীতির গেম চেঞ্জার। টানেল চালু হওয়ার কারণে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হবে শূন্য দশমিক ১৬৬ শতাংশ। টানেলের কারণে চট্টগ্রামে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়বে ব্যাপক হারে। টানেলের কারণে পর্যটন নগরী কক্সবাজার, পার্বত্য জেলা বান্দরবান এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগের নতুন দিগন্ত সূচনা হবে। সারা দেশের সঙ্গে যোগাযোগ সহজতর হবে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর মহেশখালীর মাতারবাড়ীর, মাতারবাড়ীর দেশের অন্যতম বৃহৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল, এলপিজি টার্মিনাল, অয়েল টার্মিনাল, গ্যাস ট্রান্সমিশন, সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং প্রকল্প, অয়েল রিফাইনারি, এনার্জি ও ফুড স্টোরেজ, ট্যুরিজম, এমব্যাঙ্কমেন্ট ও ওয়াটারফ্রন্ট ইকোনমিক জোনের। টানেলের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। পর্যটন শিল্প ও শিল্প বিকাশে এটি ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীতে আলোঝলমলে বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের অপেক্ষায়।   -বাংলাদেশ প্রতিদিন

চীনের সাংহাইয়ের ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’-এর আদলে চট্টগ্রাম শহর ও আনোয়ারাকে এক সূত্রে যুক্ত করতে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে তৈরি হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ টানেল। ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকার মেগা প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। টানেল পুরোদমে চালু হলে প্রতিদিন গড়ে ১৭ হাজার ২৬০টি গাড়ি চলাচল করবে। বছরে সে সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ৬৩ লাখ। ২০২৫ সালে টানেল দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলাচল করবে। যার মধ্যে অর্ধেক থাকবে পণ্যবাহী যানবাহন। ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন গড়ে ৩৭ হাজার ৯৪৬টি এবং ২০৬৭ সাল নাগাদ ১ লাখ ৬২ হাজার যানবাহন চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর