বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক ও একাডেমিক এরিয়ায় সব ধরনের দলীয় রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ সংক্রান্ত গণভোটের আয়োজন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল রাতে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হন। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে এসে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘টু জিরো টু ফোর, লেজুড়বৃত্তি নো মোর’, ‘লেজুড়বৃত্তির ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’, ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ জানান। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমম্বয়ক আবদুল কাদের, আবু বাকের মজুমদার, তাহমীদ আল মুদ্দাসির, হাসিব আল ইসলাম, হামযা মাহবুবসহ প্রমুখ। আবদুল কাদের বলেন, আমরা সাত দফায় বলেছি, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি থাকবে না।
ছাত্ররাজনীতি হবে ছাত্রদের জন্য। কিন্তু লেজুড়বৃত্তিক দলের নেতৃত্ব নির্বাচন করে তার মূল দল; ছাত্ররা নয়।
তিনি বলেন, আবাসিক হলে রাজনীতির কথা শুনলেই শিক্ষার্থীদের মানসপটে দখদারিত্ব, ভাইকে প্রটোকল দেওয়া, সকাল-বিকাল প্রোগ্রামে যাওয়ার কথা ভেসে ওঠে। আবরার ফাহাদ, আবু বকরের কথা ভেসে ওঠে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থী অসচ্ছল পরিবার থেকে উঠে আসে। অথচ একটি সিটের জন্য তাকে রাত-দিন রাজনৈতিক দলের পেছনে থাকতে হয়।
একাডেমিক এরিয়া ও আবাসিক হলে রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, রাজনীতির বিষয়ে প্রশাসন এখনো নির্বিকার ও নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু আমাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও একাডেমিক এরিয়ায় কোনো ছাত্ররাজনীতি থাকবে না। হলে কোনো সাংগঠনিক কাঠামো থাকবে না। তবে বৈধ ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জড়িতদের হলের সব সুযোগসুবিধা প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে একটি কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রাজনীতির সুরাহা করতে পারে। প্রশাসন থেকে এ বিষয়ে একটি কমিশন গঠন করা হবে। সে কমিশন ঠিক করবে, রাজনৈতিক দলগুলো কী করতে পারবে, কী করতে পারবে না। শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক ই-মেইলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে গণভোট হতে পারে।
আবু বাকের মজুমদার বলেন, এই গণ অভ্যুত্থানে ২ হাজারের বেশি শহীদ হয়েছে। ৩০ হাজারের বেশি আহত হয়েছে। অথচ জুলাই অভ্যুত্থানের তিন মাস পার হলেও আমরা ৯ দফার অন্তর্ভুক্ত দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি বাস্তবায়ন করতে পারিনি।
তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ২৮ বছর পর একবার ডাকসু দেখলেও গত ৬ বছরে তা আর হয়নি। দ্রুত ডাকসু নির্বাচন দিতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে এখনো অনেক অছাত্র বসবাস করছে। প্রশাসনের মাধ্যমে দ্রুত তাদের বের করে দেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।
তাহমীদ আল মুদ্দাসির বলেন, আমরা অন্যান্য বিষয়ের মতো ছাত্ররাজনীতিরও সংস্কার চাই। আমরা কোনো দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি চাই না। ছাত্ররাজনীতি ক্যাম্পাসে থাকবে, তবে একাডেমিক ভবন ও হলে রাজনীতি থাকবে না।
সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম বলেন, মাসল পাওয়ারের রাজনীতিকে বাংলাদেশে লালকার্ড দেখানো হয়েছে। ক্যাম্পাসের হল ও একাডেমিক এরিয়ায় কোনো দখলদারিত্বের রাজনীতি চলবে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে তার অবস্থান ক্লিয়ার করতে হবে তারা কি শিক্ষার্থীদের পক্ষে নাকি আবরারের হত্যার স্টাইলের রাজনীতির পক্ষে।