দেশের অন্য কয়েকটি স্থানের মতো খুলনা এবং যশোরেও নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। শুধু তা-ই নয়, যশোরে গত তিন দিনে তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তারা করোনায় সংক্রমিত হওয়ার পাশাপাশি কিডনিসহ অন্যান্য রোগে ভুগছিল। অঞ্চল দুটিতে নতুন করে করোনা সংক্রমণ বাড়লেও কিটসংকটে সম্ভাব্য রোগী পরীক্ষা ও চিকিৎসা প্রদান ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য উপপরিচালক মুজিবর রহমান জানান, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কিটের কিছুটা সংকট রয়েছে। যে হাসপাতালগুলোতে কিট নেই সেখানকার চাহিদা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। কিছুটা বিলম্ব হলেও প্রয়োজন অনুযায়ী কিট সরবরাহ করা হচ্ছে।
জানা যায়, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালে কিটসংকটে করোনা পরীক্ষা ব্যাহত হচ্ছে। সেই সঙ্গে কারিগরি ত্রুটিতে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আরটি-পিসিআর ল্যাব নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে বিষয়টি জানানো হলেও মেরামতের উদ্যোগ নেই।
কিটসংকটের কারণে গতকাল খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালে আসা রোগী ও বিদেশগামী কর্মীরা পরীক্ষা না করেই ফিরে যান। তেরখাদার ইলিয়াছ মোল্লা জানান, তার প্লেনের টিকিট ২৩ জুন নির্ধারিত রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার তিনি হাসপাতালে এলে কিটসংকটে নমুনা পরীক্ষা হয়নি। গতকাল হাসপাতালে এলে তাকে ফের কিটসংকটের কথা বলা হয়। করোনা পরীক্ষা করাতে না পারলে তিনি সময়মতো বিদেশে কর্মস্থলে ফিরতে পারবে না। একইভাবে নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট না থাকায় অপারেশনের জন্য অপেক্ষায় থাকা রোগীরাও ভোগান্তিতে রয়েছে।
জানা যায়, খুলনা নগরীতে গতকাল পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষায় চারজনের করোনা শনাক্ত হয়। এর মধ্যে করুনা বেগম নামে একজন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাকিরা শারীরিকভাবে সুস্থ থাকায় তাদের বাড়িতে রেখে চিকিৎসা নিতে বলা হয়েছে।
অপরদিকে গত বুধ থেকে শুক্রবার এ তিন দিনে যশোর জেনারেল হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত তিন রোগীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এতে সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। তবে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে মাস্ক ব্যবহার ও সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে। হাসপাতাল সূত্র জানায়, বুধবার সকালে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেখ আমির নামে ৬৮ বছর বয়সি এক ব্যক্তি মারা যান। একই দিন দিবাগত রাত ১টার দিকে একই হাসপাতালে ইউসুফ আলী (৪২) নামে আরেক ব্যক্তি মারা যান। তারা দুজনেই করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। তাদের সঙ্গে একই হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি ছিলেন সাবিলা খাতুন (৫৫) নামে এক নারী। তিনি মারা যান শুক্রবার বিকালে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, শেখ আমির পিত্তথলি ও পিত্তনালীতে পাথর এবং অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি (একেআই) নিয়ে ৫ জুন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পরে তার ঠান্ডা ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ায় করোনা পরীক্ষা করা হয়। ১৬ জুন তার করোনা পজিটিভ রেজাল্ট আসে। একই দিন রাতে মারা যাওয়া ইউসুফ আলী কিডনি রোগ নিয়ে ১৩ জুন যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর তার দুবার ডায়ালাইসিস করা হয়। পরে তার ঠান্ডা ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে করোনা পরীক্ষা করা হয় এবং পজিটিভ রেজাল্ট আসে। আর সাবিলা খাতুন করোনা উপসর্গ নিয়েই ৫ জুন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. উবায়দুল কাদির উজ্জল বলেন, যশোর জেনারেল হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে আরও তিনজন রোগী ভর্তি আছেন। কিন্তু কিট না থাকায় তাদের পরীক্ষা ও চিকিৎসা প্রদানে জটিলতা দেখা দিয়েছে। যে তিনজন মারা গেছেন, তাদের সবার করোনা পরীক্ষা করা হয় শহরের ইবনে সিনা ক্লিনিকে। অ্যান্টিজেন টেস্টে তিনজনেরই করোনা পজিটিভ আসে।
করোনার প্রথম ওয়েভে যশোর অঞ্চলের সন্দেহভাজন করোনা রোগীদের নমুনা পরীক্ষা করা হতো যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারের আরটিপিসিআর ল্যাবে। তবে কিটসংকটে এখানে করোনা পরীক্ষা শুরু করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মো. মাসুদ রানা বলেন, যবিপ্রবির আরটিপিসিআর ল্যাবের জন্য কিট চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই কিট চলে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।