প্রগতিশীল আন্দোলনের অন্যতম মুখ বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহফুজা খানমকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছে তাঁর সহকর্মী, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সহযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ এবং স্বজনরা। সর্বস্তরের মানুষের জন্য শ্রদ্ধা জানাতে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তাঁর লাশ নেওয়া হয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজার পর মাহফুজা খানমকে আজিমপুর কবরস্থানের ২ নম্বর গেটে সমাহিত করা হয়। এদিন তাঁকে শেষ বিদায় জানাতে শহীদ মিনারে ভিড় জমিয়েছিলেন শত শত মানুষ। প্রথমেই এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গার্ড অব অর্নার দেওয়া হয়। এরপর তার স্মৃতিবিজড়িত সংগঠন খেলাঘর, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, এশিয়াটিক সোসাইটি তাঁর লাশে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।
১৯৬৬ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন থেকে মনোনয়ন পেয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (ডাকসু) ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ডাকসুর ইতিহাসে তিনিই একমাত্র নারী ভিপি ছিলেন। এ ছাড়া মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের চেয়ারপারসনের দায়িত্বে ছিলেন।
তার লাশ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, কচিকাঁচার মেলা, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গেরিলা ১৯৭১, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), ঐক্যন্যাপ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, নারী প্রগতি সংঘ, মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ জাসদ, গণফোরাম, মানিকগঞ্জ সমিতিসহ অসংখ্য সংগঠন।
এ সময় মাহফুজা খানমের ছেলে মাহবুব শফিক বলেন, ‘মা সবসময় আমাদের পাশে ছিলেন। তাঁর জন্যই আমরা আমাদের পেশায় পৌঁছেছি। মা আমাদের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে শক্তি ও উৎসাহ দিয়েছেন।’ ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘তিনি সবাইকে কাছে টানার অসাধারণ ক্ষমতা রাখতেন। তাঁর সঙ্গে থাকার অভিজ্ঞতা সব সময় মনে থাকবে।’ অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ বলেন, ‘মাহফুজা খানমের কাজ ও প্রভাব মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবে। আমরা তাঁকে ভুলতে পারব না।’
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তাঁর লাশ ডাকসু ভবনের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাকসুর সাবেক ছাত্রনেতারা শেষবারের মতো তাঁকে ঘিরে দাঁড়ান।
সেখানে তাঁর সতীর্থরা বলেন, ’বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি প্রগতিশীল আন্দোলনে তিনি সামনের সারিতে ছিলেন। মানুষকে জাগিয়ে তুলতে এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠায় তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তার কাজের মধ্যেই তিনি চিরজীবী।’