সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও করোনা ভাইরাস বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বশীল লোকজন সাধারণ মানুষের সতর্কতার কাজ শুরু করেছেন। এতে বিদেশফেরত বা প্রবাসীরা বাড়িতে এসেও কোন ধরণের নিয়মই মানছেন না। যে যার মতো করে চলাফেরা শুরু করেছেন। ফলে প্রবাসীদের কেউ এই ভাইরাসের ছোঁয়া বা আক্রান্ত হলে সেটি অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে যাবেন। তবে প্রশাসন শক্ত নজরদারিতে রেখেছেন সচেতনভাবে। প্রবাসীদের মধ্যে বেশকজন কোয়ারেন্টাইন না মেনে বের হওয়ার অপরাধে জরিমানাও করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের হাটহাজারীর নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমীন বলেন, করোনা ভাইরাস একটি মারাত্মক রোগ। এতে রোগটি যাতে ছড়িয়ে না চায়, সে বিষয়ে সরকারের নানাবিধ সচেতনতামূলক নির্দেশনাও রয়েছে। এসব বিষয়ে বলা হলেও অনেকেই মানছেন না। তিনি বলেন, বিদেশ থেকে আসা প্রবাসী ভাইদের যাছাই-বাছাই করেই ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা রয়েছে। এতে প্রবাসীরা তা না মেনে বাইরে ঘোরাফেরা করছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। এজন্য যারাই বিদেশ থেকে দেশে আসবেন তাদের বাধ্যতামূলকভাবে হোম কোয়ারেন্টাইনেই থাকবে হবে। যারা অমান্য করছেন, তাদেরকে জরিমানাও করা হচ্ছে। তাছাড়া বাজার মনিটরিং এবং এলাকার বিভিন্ন স্থানে মাইকিং এর মাধ্যমেও সচেতনতামুলক প্রচার-প্রচারণা চলছে।
বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আছিয়া খাতুন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার দুবাই থেকে একজন প্রবাসী দেশে এসেই বাইরে ঘুরাফেরা করছেন। একইভাবে আরেকজন এক যুবক সপ্তাহ আগেই এসেছেন। এদের একজনের কয়েকদিন পরেই বিয়ের মুল অনুষ্ঠান। দুইজনের কেউ হোম কোয়ারেন্টাইনের বিধি না মেনে নানাবিধ সামাজিক আয়োজনে অংশ নিয়েছেন। প্রকাশ্যে বাইরে ঘোরাফেরাও করছিলেন। এতে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হয়েছে। তবে এলাকায় নানাবিধ সচেতনতামুলক কর্মকান্ড অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
চট্টগ্রামে করোনায় উচ্চ ঝুঁকিতে জানিয়ে সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বী বলেছেন, সরকারের পাশাপাশি নিজেদেরও সচেতন হতে হবে। চট্টগ্রামে বর্তমানে প্রবাসীসহ অনেকজন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। বিদেশ ফেরতদের এটা মানতে হবে। নানা কারণে করোনার উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম। এখানে বিমানবন্দরের পাশাপাশি সমুদ্রবন্দর রয়েছে। প্রায় প্রতিটি উপজেলায় প্রবাসী লোকজনের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ প্রবাসী নাগরিকের সংখ্যাও দেশের অন্য জেলার চেয়েও বেশি। এসব কারণে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে চট্টগ্রামকে। তবে কোয়ারেন্টিনের জন্য রেলওয়ে হাসপাতালসহ কয়েকটি হাসপাতাল প্রস্তুত রয়েছে। তাছাড়া রোগের লক্ষণ দেখা দিলে ফৌজদারহাট বিআইটিআইডিতে দ্রুত পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বিদেশ থেকে এসে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইন না থাকায় চট্টগ্রামের হাটহাজারী, রাউজান, আনোয়ারা, পটিয়া, লোহাগাড়া ও নগরীর ৭ প্রবাসীকে জরিমানা করা হয়েছে। এসব প্রবাসীরা গত ৮ থেকে ১৮ মার্চের মধ্যে দেশে এসেছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে পৃথক অভিযানে ৬ প্রবাসীকে ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করে সতর্কও করেছেন।
এদের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ প্রবাসী হাটহাজারীর বাসিন্দা, মধ্যপ্রাচ্যের ওমান প্রবাসী রাউজানের বাসিন্দা, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই প্রবাসী আনোয়ারার বাসিন্দা, সংযুক্ত আরব আমিরাতের রা’সুল খাইমা প্রবাসী পটিয়ার বাসিন্দা, মধ্যপ্রাচ্যের ওমান প্রবাসী লোহাগাড়ার বাসিন্দা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই অপর এক প্রবাসী নগরীর চশমা হিলের বাসিন্দা। বোয়ালখালির দুবাইফেরত এক প্রবাসী কোয়ারেন্টাইনে না থেকে সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার অপরাধে পৃথকভাবে দুইজনকে জরিমানা করা হয়েছে। এ দিকে ইতালিফেরত এক যুবককে নগরীর কাজীর দেউড়ি এলাকা থেকে আটক করে পুনরায় ঘরে পাঠিয়ে দেন সিটি করপোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেট আফিয়া আকতার।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার