রাজধানীর কুড়িলে বেতন-ভাতার দাবিতে ফের সড়ক অবরোধ করেছেন ইউরোজোন ফ্যাশন গার্মেন্টের শ্রমিকরা। এতে বাড্ডা-কুড়িল, মহাখালী-কুড়িল, মাটিকাটা সড়কের মিরপুর-কুড়িল সড়ক এবং বিমানবন্দর, উত্তরা সড়কে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দিনভর তীব্র ভোগান্তিতে পড়েন এই সড়ক ব্যবহারকারী যাত্রী ও সাধারণ মানুষ।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ৩ সেপ্টেম্বর ইউরোজোন কারখানার শ্রমিকরা কুড়িল এলাকায় প্রায় চার ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছিল। তখন ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বকেয়া পরিশোধের আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করেছিল তারা। পরে আশ্বাস অনুযায়ী বেতন না পেয়ে আবারও সড়কে অবস্থান নেয় শ্রমিকরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা থেকে যানজট প্রায় পুরো রাজধানীজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে রামপুরা, বনানী, গুলশান, শেওড়াপাড়া হয়ে জাহাঙ্গীর গেট, বিজয় সরণি হয়ে ফার্মগেট এলাকা ও আগারগাঁও পর্যন্ত তীব্র যানজটে যানবাহন থমকে আছে রাত পর্যন্ত। চলাচলকারীদের অভিযোগ, প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে একই জায়গায় যানবাহন দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে এয়ারপোর্ট থেকে রামপুরা হয়ে গুলিস্তান অভিমুখে যাওয়ার সড়কে কোনো গণপরিবহন না থাকায় যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। এই সড়কের পাশাপাশি, বিমানবন্দর হয়ে বনানী, মহাখালী ও বিজয় সরণি যাওয়ার রাস্তায় গণপরিবহন না থাকায় যাত্রীরা সড়কে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাত পর্যন্ত। কোনো কোনো সড়কে যাত্রীদের ভিড় করে গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। অন্যদিকে, রাতে গুলশান বিভাগের ট্রাফিক পুলিশ তাদের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে জানিয়েছে, শ্যাওড়া (জোয়ার সাহারা) এলাকায় সড়ক অবরোধকারী পোশাক কর্মীদের পুলিশ টিয়ার শেল ব্যবহার করে সরিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে উত্তরা-ঢাকা রোডে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। তবে রাত সাড়ে ৮টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কুড়িল-রামপুরা রুটের উভয় দিকে আন্দোলনকারীরা রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে।
গাজীপুরে বেতন-ভাতার দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ : গাজীপুরে বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে বিক্ষোভ ও অবরোধ করেছেন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। গতকাল সকাল সোয়া ৭টার দিকে সিটি করপোরেশনের বাসন থানাধীন দীঘিরচালা এলাকায় শিনওয়ান গার্মেন্টস কোং লিমিটেডের (প্রতিষ্ঠানটি বুলবুল নিটিং নামে পরিচিত) শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) বাসন থানার এসআই সজীব হাসান জানান, সকালে শ্রমিকরা বেতন-ভাতার দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ও শিল্প পুলিশ তাদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এ ছাড়াও কারখানা এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ ও শ্রমিক সূত্রে জানা গেছে, শিনওয়ান গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিকদের আগস্ট মাসের বকেয়া বেতন ও নাইট বিল পরিশোধ করেনি কর্তৃপক্ষ। কারখানা কর্তৃপক্ষ বেতন দিতে টালবাহানা করে আসছিল। একপর্যায়ে শ্রমিকরা গতকাল সকালে কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বেতন-ভাতার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিতে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। পরে পুলিশ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, আগস্ট মাসের বেতন ১০ সেপ্টেম্বর পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ তা পরিশোধ করেনি। এ ছাড়া কারখানা মালিকের মোবাইল বন্ধ থাকার কারণে বেতন পরিশোধের বিষয়ে কারখানার কর্তৃপক্ষ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।