‘জেন জি’ আন্দোলনকারীদের দাবির সঙ্গে একমত হয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কিকে নেপালের অন্তবর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী করার বিষয়ে নীতিগতভাবে সম্মতি জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পৌডেল।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) নেপাল নিউজ তাদের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শীতলনিবাসে সংবিধান বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়ার পর, তিনি এ পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুত হলেও সংসদ ভেঙে দেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা প্রকাশ করেছেন, কারণ তিনি একটি সাংবিধানিক সংকটের আশঙ্কা করছেন।
নেপাল নিউজ জানায়, পৌডেল ও কার্কি সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে আলোচনা করেছেন। কার্কী যুক্তি দেখিয়েছেন যে, সংসদ ভেঙে না দিলে একজন সংসদ সদস্য নন এমন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন না, অন্যদিকে পাউদেল তাকে সংসদ ভাঙা ছাড়া নিয়োগের বিকল্প উপায় খুঁজছেন। রাতভর আলোচনায় কোনো সমাধান হয়নি এবং শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে আরও পরামর্শ নেওয়া হবে।
বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন এমন একজন আইনজীবীকে উদ্ধৃত করে নেপাল নিউজ লিখেছে, “আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে, কিন্তু এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।”
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন সংবিধানিক আইন বিশেষজ্ঞ ভীমার্জুন আচার্য, বিপিন আধিকারী, পূর্ণমান শাক্য, চন্দ্রকান্ত গ্যাওয়ালি, সূর্য ধুঙ্গেল ও ললিত বাহাদুর বসনেত।
৮–৯ সেপ্টেম্বরের জেন-জি বিক্ষোভে ৩০-এর বেশি নিহত এবং এক হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। আন্দোলনকারীরা সংসদ ভাঙা এবং সুশিলা কার্কীর নিয়োগের দাবি জানিয়েছিলেন, দলীয় নেতাদের প্রত্যাখ্যান করে।
এই পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট পাউদেল একজন স্বাধীন ব্যক্তিকে নিয়োগের কথা ভাবছেন, তবে সংবিধানগত জটিলতা এখনও রয়ে গেছে। আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল আর্টিকেল ৬১(৪) এবং ৩০৫।
আর্টিকেল ৬১(৪) প্রেসিডেন্টকে সংবিধান রক্ষার দায়িত্ব দেয়, আর আর্টিকেল ৩০৫ কেবিনেটের সুপারিশে সাময়িক আদেশ জারি করার সুযোগ প্রদান করে, যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন এটি এখন প্রযোজ্য নয়।
বিক্ষোভ চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি পদত্যাগ করলে সংকট আরও গভীর হয়। তারপর থেকে নিরাপত্তার দায়িত্ব নেপাল সেনাবাহিনীকে দেওয়া হয়েছে, অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে।
নেপালের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি কার্কি ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কড়া অবস্থানের জন্য সুপরিচিত ছিলেন তিনি।
কৃষক পরিবারের সন্তান কার্কি ৭ ভাইবোনের মধ্যে সবার বড়, তার পরিবারের সঙ্গে নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিপি কৈরালার পরিবারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। কৈরালা ১৯৫৯ সাল থেকে ১৯৬০ পর্যন্ত নেপালের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।
১৯৭২ সালে মাহেন্দ্র মোরং ক্যাম্পাস থেকে বিএ পাস করা কার্কি ১৯৭৫ সালে ভারতের বানারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পলিটিকাল সায়েন্সে এমএ শেষ করেন। পরে তিনি ১৯৭৮ সালে ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনশাস্ত্রে ডিগ্রি নেন।
তিনি প্রধান বিচারপতি থাকাকালে সেসময়কার তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রী জয়প্রকাশ প্রসাদ গুপ্ত দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন।
তার রায়ে দুর্নীতি দমন কর্তৃপক্ষের প্রভাবশালী এক প্রধান অপসারিত হওয়ার পর ‘পক্ষপাতদুষ্ট রায় দেওয়ার অভিযোগে’ সেসময় ক্ষমতাসীন নেপালি কংগ্রেস ও কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (মাওয়িস্ট সেন্টার) তাকে অভিশংসনের প্রক্রিয়া শুরু করে। এ কারণে সাময়িক সময়ের জন্য বরখাস্তও ছিলেন তিনি।
সূত্র: নেপাল নিউজ
বিডি প্রতিদিন/নাজিম