সমীকরণ ৩ বলে ১৭ রানের। ২০তম ওভারের চার নম্বর বলে ছক্কা মারেন তাসকিন আহমেদ। ম্যাচ জমে ওঠে। হঠাৎ করে টিভি স্ক্রিনে ভেসে ওঠে তাসকিন হিট উইকেট। আউট তাসকিন। বাংলাদেশ অলআউট ১৪৯ রানে। হেরে যায় ম্যাচ ১৬ রানে। জয়ের টার্গেট ছিল ১৬৬ রান। টানা ৪টি-২০ সিরিজ জেতা বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জিং হলেও অসম্ভব কিছু ছিল না। সিরিজ শুরুর আগে টাইগার অধিনায়ক লিটন দাস বলেন, সিরিজের ম্যাচগুলো অনেক চ্যালেঞ্জিং হবে। চট্টগ্রামের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে ক্যারিবীয়রা উতরে গেলেও টাইগাররা পারেননি।
বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লে. মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে এর আগে আরও ২৭টি টি-২০ ম্যাচ হয়েছে। বাংলাদেশ খেলেছে ১৪ ম্যাচ। কিন্তু কখনোই মুখোমুখি হয়নি দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের। বন্দরনগরীতে দুই দলের টি-২০ অভিষেক হয়েছে গতকাল। অভিষেক ম্যাচটিতে জিতে তিন ম্যাচ টি-২০ সিরিজে এগিয়ে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আগামীকাল সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ। ম্যাচটি দুই দলের জন্য যেমন স্মরণীয়, তেমনি রভম্যান পাওয়েলের জন্যও স্পেশাল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ১০০তম টি-২০ ম্যাচ খেলেন পাওয়েল। দুই দল বাংলাদেশের মাটিতে টি-২০ সিরিজ খেলছে ২০১৮ সালের পর। ওই সিরিজটি ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অবশ্য গত ডিসেম্বরে ক্যারিবীয়দের তাদের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ করেছিল লিটন বাহিনী। গতকাল দুই দল কালো ফিতা পরে খেলেছে বরিশালের ফিজিও হাসান আহমেদের অকাল মৃত্যুতে।
পাজরের ইনজুরিতে টানা পাঁচটি-২০ ম্যাচ খেলেননি লিটন। টি-২০ এশিয়া কাপের সুপার ফোরের শেষ দুই ম্যাচ এবং শারজাহতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-২০ সিরিজ খেলেননি লিটন। তার পরিবর্তে ম্যাচগুলোতে টাইগারদের নেতৃত্ব দেন জাকের আলি অনীক। এশিয়া কাপে জিততে না পারলেও আফগানিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লে. মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে গতকাল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে যে একাদশ খেলেছে লিটন বাহিনী, সেখানে জায়গা হয়নি সর্বশেষ টি-২০ অধিনায়ক জাকেরের। অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্যি। প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করার পরের সিরিজে খেলার সুযোগ পাননি অধিনায়ক। একাদশে লিটনের ফেরাতেই ছন্দ হারিয়ে বাদ পড়েন জাকের। জাকের বাদ পড়ার ম্যাচে টস হেরে ফিল্ডিং করেছে লিটন বাহিনী। প্রথম ১৫ ওভার পর্যন্ত ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নিজেদের হাতে রেখেছিল টাইগাররা। ৬ ওভারের পাওয়ার প্লেতে বিনা উইকেটে ৩৫ রান করেছিল সফরকারীরা। ১০ ওভারে ১ উইকেটে ৭০ ও ১৫ ওভারে ৩ উইকেটে ১০১ রান করে হোপ বাহিনী। শেষ দিকে অধিনায়ক শাই হোপ ও রভম্যান পাওয়েলের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ৩ উইকেটে ১৬৫ রানের লড়াকু ইনিংস করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুজনে শেষ ৫ ওভারে ৬৪ রান যোগ করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর কার্ডে। বিশেষ করে ম্যাচ সেরা পাওয়েল তার ১০০তম টি-২০ ম্যাচটিকে স্মরণীয় করে রাখেন ৪ ছক্কায় ২৮ বলে ৪৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে। ইনিংসের শেষ ওভারে তানজিম সাকিবকে টানা তিন ছক্কা মারেন তিনি। পাওয়েলের আগে কাইরন পোলার্ড ১০১ ও নিকোলাস পুরান ১০৬টি টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন। অধিনায়ক হোপ ২৮ বলে ৪ ছক্কায় ৪৬ রানে অপরাজিত থাকেন। শেষ দিকে ক্যারিবীয়দের ব্যাটিং তান্ডবেও ১৩ নম্বর ওভারের প্রথম ও দ্বিতীয় বলে টানা উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিকের আশা জাগিয়েছিলেন তাসকিন। ইনিংস শেষে তার স্পেল ৪-০-৩৬-২। বাঁ-হাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমান মিতব্যয়ী বোলিং করেন। নাসুমের স্পেল ৪-০-১৫-০ এবং মুস্তাফিজের স্পেল ৪-০-২৪-০। খরুচে বোলিং করেন রিশাদ হোসেন। ওয়ানডে সিরিজ সেরা লেগ স্পিনারের স্পেল ৪-০-৪০-১। শেষ ওভারে টানা ৩ ছক্কা খেয়ে তালগোল হারানো তানজিমের স্পেল ৪-০-৪৭-০। ওয়ানডে সিরিজ হারানো ক্যারিবীয়রা গতকাল এতটাই খ্যাপাটে ব্যাটিং করেছেন যে, মোট ১১টি ছক্কা মেরেছে ইনিংসে। ৫টিই আবার শেষ পাঁচ ওভারে।