থুতু ফেলা নিয়ে সাভারে সিটি ইউনিভার্সিটি ও ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় রাতভর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রবিবার রাতের এ ঘটনায় উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর সুলতান মাহমুদ ইউনিভার্সিটি দুটি পরিদর্শন করেছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষাসমূহ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সিটি ইউনিভার্সিটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা উজ্জল সরকার বলেন, হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা অ্যাডমিন অফিস, রেজিস্ট্রার অফিস, ভিসি, প্রোভিসি, ডেপুটি ডিরেক্টরের রুমসহ বিভিন্ন রুমের মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। কম্পিউটার ল্যাবে যেসব কম্পিউটার ছিল, তারা সবই লুটে করে নিয়ে গেছে। রাত সাড়ে ১২টা থেকে ভোর রাত সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে তাণ্ডব চালিয়েছে।
সিটি ইউনিভার্সিটির চিকিৎসক হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘সিটি ইউনিভার্সিটি একটি ট্রাস্টি প্রতিষ্ঠান। আমরা সবচেয়ে কম খরচে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিই। গতকাল (রবিবার) রাতে অসাবধানতাবশত আমাদের ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থীর থুতু ড্যাফোডিলের এক শিক্ষার্থীর গায়ে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গেই সে ক্ষমা চায়। সমস্যা সমাধান হয়। পরে রাত ১২টার দিকে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা আমাদের ক্যাম্পাসে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট চালায়।’
সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ফরিদুল আলম বলেন, ‘ক্যাম্পাসে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের সময় প্রশাসনিক ভবনের ভিতর থেকে রাত ৩টার দিকে দেশীয় অস্ত্রসহ আমরা ১১ জনকে আটক করি। এ সময় ছয়জনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে পাঠাই। এখনো তাদের পাঁচজন আমাদের হেফাজতে রয়েছে। ড্যাফোডিলের ভিসি এবং চেয়ারম্যানকে এখানে আসতে হবে। তবেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে।’ জানা গেছে, আটক ওই পাঁচ শিক্ষার্থীকে গতকাল বেলা ৩টার দিকে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছে সিটি ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ।গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির সায়েন্স অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজিস ডিপার্টমেন্টের ডিন অধ্যাপক বিমল চন্দ্র দাস সিটি ইউনিভার্সিটি পরিদর্শন করেন এবং ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের চিত্র দেখে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি ও সিটি ইউনিভার্সিটির মধ্যে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, সেই ঘটনা ফিজিক্যালি দেখার জন্য এসেছি। আমার সঙ্গে আমাদের ইউনিভার্সিটির কর্মকর্তারা রয়েছেন এবং সিটি ইউনিভার্সিটির ভিসি স্যার রয়েছেন। এখানে যে ভাঙচুর ও ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে, সেজন্য আমি সত্যি সত্যি লজ্জিত এবং এর জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।’
সিটি ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার প্রফেসর মীর আকতার হোসেন বলেন, সংঘর্ষে তিনটি বাস ও একাধিক গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, চার থেকে পাঁচ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মুখপাত্র প্রফেসর ড. সৈয়দ মিজানুর রহমান রাজু বলেন, একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত।
সিটি ইউনিভার্সিটির উপাচার্য লুৎফর রহমান বলেন, সিটি ইউনিভার্সিটি আট দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল দুপুর থেকে সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা হল ত্যাগ করা শুরু করেন।
এদিকে মিরপুর-বিরুলিয়া সড়ক অবরোধ থাকার পর গতকাল বেলা ৩টা থেকে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।