গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন এলাকায় আক্রমণ বন্ধ করেনি ইসরায়েল। ১০ অক্টোবরের চুক্তির পর গাজায় কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও ইসরায়েল লেবানন, সিরিয়া ও পশ্চিম তীরসহ একাধিক স্থানে আক্রমণ চালাচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, প্রতিবেশী দেশগুলোকে অস্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যেই এসব আগ্রাসন চলছে।
পশ্চিম তীরে দমন অভিযান ও হত্যা
দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনারা ফিলিস্তিনিদের ওপর দমননীতি আরও জোরদার করেছে। শুধু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত সেখানে এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। সেনা ও ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা (সেটলাররা) টানা দ্বিতীয় সপ্তাহেও জলপাই সংগ্রহে যাওয়া কৃষকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে ও আটক করছে। আটককৃতদের মধ্যে কয়েকজন আগে যুদ্ধবিরতির সময় বন্দিবিনিময়ে মুক্তি পেয়েছিলেন বলে খবর দিয়েছে ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ‘ওয়াফা’।
সিরিয়ায় দৈনিক অনুপ্রবেশ ও হামলা
সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলি সেনারা প্রায় প্রতিদিনই সীমান্ত লঙ্ঘন করছে। দেশটির সরকারি বার্তা সংস্থা ‘সানা’ জানিয়েছে, সম্প্রতি কুনেইত্রার কয়েকটি গ্রামে ইসরায়েলি বাহিনী প্রবেশ করে চেকপোস্ট স্থাপন ও স্থানীয়দের হয়রানি করেছে। সিরিয়া জাতিসংঘে অভিযোগ জানিয়েছে যে এসব অনুপ্রবেশ ১৯৭৪ সালের ‘ডিসএনগেজমেন্ট চুক্তি’ লঙ্ঘন করছে।
লেবাননে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ ও বিমান হামলা
লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলেও ইসরায়েলি বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে। গত সপ্তাহে নাবি চিত ও নাকুরা এলাকায় অন্তত দুইজন নিহত হন। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী (ইউএনআইফিল) জানিয়েছে, ইসরায়েলি এক ড্রোন তাদের টহল এলাকায় গ্রেনেড ফেলে; পরে ট্যাংক থেকেও গুলি চালানো হয়। যদিও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি, তবে উত্তেজনা বেড়েছে।
ইসরায়েল ২০২৪ সালের নভেম্বরে লেবাননের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি করলেও এখনো দেশটির দক্ষিণ সীমান্তে সেনা অবস্থান বজায় রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায়ও ইসরায়েলকে আক্রমণ থামাতে রাজি করানো যায়নি।
গাজায় নতুন করে প্রাণহানি
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স দাবি করেছেন, হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ‘প্রত্যাশার চেয়ে ভালো’ চলছে। কিন্তু বাস্তবে গাজায় ইসরায়েলের হামলা থামেনি। শনিবার রাতে নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরে এক ড্রোন হামলায় এক ফিলিস্তিনি নিহত ও চারজন আহত হন। যুদ্ধবিরতির পর থেকে গাজায় প্রায় ১০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
এ ছাড়া ইসরায়েল এখনো গাজার সীমান্ত দিয়ে চিকিৎসা ও ত্রাণ সহায়তা বন্ধ রেখেছে। গুরুতর অসুস্থ রোগীরাও চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে পারছেন না।
বিশ্লেষকদের মতে, গাজা ও আশপাশের দেশগুলোতে অব্যাহত ইসরায়েলি হামলা শুধু যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘনই নয়, বরং পুরো অঞ্চলকে নতুন করে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল