অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া চলতি বছর তৃতীয়বারের মতো বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। নতুন জীবনের শুরুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা আলোচনা-সমালোচনার মুখে তিনি সবকিছুর জবাব দিয়েছেন এক আবেগঘন পোস্টে, যেখানে উঠে এসেছে তার আত্মবিশ্বাস, সাহস আর জীবনের প্রতি গভীর উপলব্ধি। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ফারিয়া লেখেন, ‘যারা একাধিকবার বিয়ে করেছেন, তারা তাদের অতীত নিয়ে গর্ব করেন না। একটা সম্পর্ক ভাঙার পর আবার নতুন করে ভালোবাসা, বিশ্বাস আর আস্থা রাখা বিশাল সাহসের ব্যাপার। নতুন করে শুরু করতে শক্তি লাগে, লজ্জা নয়।’ ব্যক্তিগত জীবনের উত্থান-পতনকে শক্তির রূপে দেখছেন শবনম ফারিয়া। তার কথায়, ‘নতুন সম্পর্ক মানে নতুন করে বিশ্বাস, ভালোবাসা ও সাহস নিয়ে পথচলা, যা কখনোই লজ্জার নয়, বরং জীবনের প্রতি এক নতুন আস্থা।’ শবনম ফারিয়ার এমন কথা ‘সাহসের নাকি লজ্জার’। এই প্রশ্ন তুলেছেন নেটিজেনরা। কারণ শোবিজ অঙ্গনের তারকাদের মাঝে
একটি রেওয়াজ চালু রয়েছে যে, তারা প্রেম আর বিয়ের কথা বরাবরই গোপন রাখেন। অজুহাত দেখান ক্যারিয়ারের স্বার্থেই নাকি এই গোপনীয়তা। যখন তাদের প্রেম বিয়ের গুঞ্জন চাউর হয় তখন একে মিথ্যা আখ্যা দিয়ে তারা দোষারোপ করেন সাংবাদিকদের। এভাবেই চলছে বিশ্বের প্রায় সব দেশের শোবিজ তারকাদের প্রেম বিয়ের লুকোচুরি খেলা। আর একাধিক বিয়ে হলে তো এই গোপনীয়তা আরও বাড়ে। মনোবিদরা এটিকে তারকাদের সাহস নয়, লজ্জা হিসেবেই দেখে বলছেন ‘এমন হীনমন্যতায় ভোগা উচিত নয়।’ আমাদের দেশেই এমন উদাহরণ ভূরি ভূরি রয়েছে। যেমন মেহজাবীন চৌধুরীর সঙ্গে প্রেম, একসঙ্গে বসবাস, বিয়ের গুঞ্জনে বহুবার খবরের শিরোনাম হয়েছেন নির্মাতা আদনান আল রাজীব। কিন্তু বারবারই তা অস্বীকার করেছেন তারা। শেষ পর্যন্ত তাদের গোপন কথাটি আর গোপন থাকেনি। গত বছর গোপন প্রেমের কথা স্বীকার করে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তারা। প্রেম নিয়ে রাখঢাক করার কথা জানতে চাইলে বিরক্ত হয়ে এ অভিনেত্রী ও নির্মাতা বলেছিলেন, ‘অতিরঞ্জিত সাংবাদিকতার আত্মার শান্তি কামনা করি।’ এর আগে বিদ্যা সিনহা মিম ও সনি পোদ্দারের বিয়ে হয় চুপিসারে। শোবিজ বাতাসে ভেসেছিল সাবিলা নূর-নেহালের সম্পর্ক, প্রেম ও বিয়ের খবর। তা নিয়ে সংবাদ হলে গুজব হিসেবে উড়িয়ে দিলেও পরে দুজনে ঠিকই গাঁটছড়া বাঁধেন। টয়া-শাওনের বিয়েটাও হুট করেই হয়। বিভিন্ন বিষয়ে নিজ থেকে সংবাদ জানানোর ব্যাপারে উদার থাকলেও তারকারা বিয়ে করেন চুপি চুপি। এভাবেই পড়শী, স্পর্শিয়া, তানজিকা আমিন বা মৌসুমী হামিদের বিয়ে নিয়েও সরগরম ছিল মিডিয়াপাড়া। স্বাগতার গোপন লিভটুগেদার, এরপর প্রেগন্যান্সি এই গোপন সম্পর্কের ধারাবাহিকতা। এদের মতোই শাকিব খান, অপু বিশ্বাস, বুবলী, মিথিলা, আফসানা মিমি, বাঁধন, সুবর্ণা মুস্তাফা, সিঁথি সাহা, রোশান, সুমাইয়া শিমু, শশী, নাদিয়া মিম, হাবিব, সিমলা, অর্ষা-ইমরান, শাবনূর, হিল্লোল-নওশীন, সালমা, ন্যান্সি, লিজা, মিমো, ওমর সানী-মৌসুমী, পুতুল, কনা, প্রতীক হাসান, আঁচল, ইলিয়াস, প্রসূন আজাদ, সুবাহ, কর্ণিয়াসহ অনেক শিল্পী বিয়ে করেছেন গোপনে। অনেকে আবার সন্তানও জন্ম দিয়েছেন গোপনেই। নীরবে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন সিয়ামও। অবন্তির সঙ্গে গোপনে গায়েহলুদ হওয়ার পর কিছু আলোকচিত্র চলে যায় ফেসবুকে। বিয়ের খবর গণমাধ্যমে আসুক, এটা যেন মানতেই পারছিলেন না সিয়াম। আরিফিন শুভও বিয়ে করেছিলেন গোপনে, পরে তা বিচ্ছেদে গড়ায়। আর নায়িকা অপু বিশ্বাস যখন সন্তানসম্ভবা হন তখন থেকেই একটু একটু করে শাকিব খানের গোপন বিয়ের খবরটি প্রকাশ্যে আসতে থাকে। এখনো তাদের সম্পর্ক নিয়ে চলে আলোচনা। শাকিব-বুবলীর গোপন সম্পর্ক-বিয়ে ও সন্তান নিয়েও মিডিয়ায় চলে জোর গুঞ্জন। প্রথমে তারা দুজনই বিষয়টিকে মিথ্যা হিসেবে দাবি করলেও শেষ পর্যন্ত বুবলীই সব ফাঁস করে দেন। আর শাকিব তুলে ধরতে থাকেন নানা খোঁড়া ব্যাখ্যা। এতে তারা লজ্জা না পেলেও লজ্জিত হন তাদের দর্শক- ভক্তরা। নায়ক ইমন ও সাইমন সাদিক তাদের বিয়ের কথা কখনোই প্রকাশ্যে আনতে চাননি। হুট করেই স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে তোলা কিছু ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করেন তারা। অন্যদিকে অভিনেত্রী শখ গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে করে সন্তানের মা হয়ে প্রকাশ্যে আসেন। নিলয় আলমগীরও দ্বিতীয়বার হুট করে বিয়ে করে খবর দেন সবাইকে। পরীমণি-রাজের গোপনে প্রেম, বিয়ে ও এরপর সন্তান প্রকাশ্যে আসার পরই আলোচনার জন্ম দেয়। এরপর তো ডিভোর্স জীবন পরী-রাজের। এর আগেও পরীমণি গোপনে একাধিকবার বিয়ে করেছেন। লাক্স সুন্দরী মিম মানতাসার গোপন বিয়ে একসময় প্রকাশ্যে আসে। গোপনে মাহিয়া মাহি-অপুর বিয়ে, বিয়ের পাঁচ বছরের মাথায় ডিভোর্স এবং শেষে রকিবকে বিয়ে এরপর আবার ডিভোর্স, এখন আবার ডিভোর্সের কথা অস্বীকার মাহির। এসব খবরে ভক্তরা কি আসলেই খুশি? অপূর্বর দ্বিতীয় বিয়েটাও হয় গোপনে। পপির উধাও হওয়া, গোপন বিয়ে ও সন্তান জন্মদান নিয়ে মিডিয়ায় খবর হওয়ার পরও শুধু ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয় নিয়ে প্রকাশ্যে আসেন। অথচ যে কোনো খবর সংবাদকর্মীদের নিজ থেকেই জানাতেন পপি। তাহলে বিয়ের খবর জানাতে অনিচ্ছুক কেন? এর আগে পপি গোপনে বিয়ে করেছিলেন চিত্রনায়ক শাকিল খানকে। চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়াও গোপনে বাগদান সারেন। এদিকে ফারিয়া শাহরিনও গোপনেই বিয়ে করেছেন। নাজিরা মৌ গোপনে বিয়ে করে এখন
সন্তান নিয়ে সংসার করছেন। সংগীতশিল্পী সালমা একসময় জানিয়েছিলেন তার পরিবার থেকে পাত্র খোঁজা হচ্ছে। শিগগিরই তিনি বিয়ে করবেন। কিন্তু এর কিছুদিন পরই ঢাকার এক রেস্তোরাঁয় সংবাদকর্মীদের ডেকে সালমা জানান, এক বছর আগেই তিনি বিয়ে করেছেন। এটি ছিল সালমার দ্বিতীয় বিয়ে। একসময় অভিনয়শিল্পী মমও গোপনে বিয়ে করে সংসার পাতেন চলচ্চিত্র ও নাট্য পরিচালক শিহাব শাহীনের সঙ্গে। বিয়ের বিষয়টি প্রকাশিত হোক, তা দুজনের কেউই চাননি। এর পরের কথা তো সবারই জানা।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম এবং অভিনয় ও নৃত্যশিল্পী লায়লা হাসান দম্পতি তারকাদের গোপনে বিয়ে করার বিষয়টিকে পুরোপুরি নিরুৎসাহিত করেছেন। লায়লা হাসান বলেন, ‘বিয়ে দুজন মানুষের একটি সুন্দর সম্পর্কের সূচনা। একটা সুন্দর সম্পর্ক কখনো গোপন কিংবা মিথ্যা দিয়ে শুরু হওয়া উচিত নয়। যে কারও বিয়ের খবর শুনলেই সবাই কিন্তু দোয়া করে, শুভকামনা জানায়। এটা ঠিক যে অনেকে ভাবেন, বিয়ের পর তার জনপ্রিয়তা কমে যাবে। আমি মনে করি, এটা পুরোপুরি ভুল ধারণা। যার যোগ্যতা আছে, সে বিয়ের আগে কিংবা পরে, সব সময়ই ভালো করবে। বিয়ের পর জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার বিষয়টি অজুহাত ছাড়া আর কিছু নয়। বিয়ের কারণে তারকার জনপ্রিয়তা মোটেই হারায় না। যারা বিয়ে করেছেন এবং দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছেন, তাদের জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রয়াত নায়করাজ রাজ্জাক, সোহেল রানা, ফারুক, আলমগীর, শাবানা, কবরী, সালমান শাহ, আলী যাকের, ফেরদৌসী মজুমদার প্রমুখ হচ্ছেন বড় উদাহরণ। তাই গোপনে নয়, সবাইকে জানিয়ে বিয়ে করা উচিত।’ তিনি আরও যোগ করেন, যে কোনো কারণে একাধিক বিয়ে হতেই পারে। কিন্তু তাও যদি গোপন করা হয় তাহলে তা হয়ে যায় লজ্জার। আর যদি সবাইকে জানিয়ে করা হয় এটি অবশ্যই একটি সাহসী ব্যাপার।