এ যেন অভিশপ্ত অক্টোবর। বলিউডের আকাশে কালো মেঘ যেন কিছুতেই কাটতে চাইছে না। ২০ অক্টোবর বলিউডের জনপ্রিয় কমেডিয়ান গোবর্ধন আসরানির মৃত্যুর খবর নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা দেশকে। ঘণ্টাখানেক আগে যে মানুষটি ‘হ্যাপি দিওয়ালি’র শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন, তার মৃত্যুর খবর কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারেনি বিটাউন। তার ঠিক দিন পাঁচেকের ব্যবধানে ২৫ অক্টোবর ইহলোকের মায়া কাটিয়ে পরলোকের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন বলিপাড়ার আরেক হাসির রাজা সতীশ শাহ। এক সপ্তাহের মধ্যে হিন্দি সিনে দুনিয়ার দুই ‘কমেডি কিং’ সতীশ-আসরানিকে হারিয়ে শোকাচ্ছন্ন অনুরাগীকুল। ‘সারাভাই’ খ্যাত সতীশ শাহের মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসতেই দুই কৌতুক অভিনেতার স্মৃতিচারণায় ডুব দিয়েছে নেটভুবন। সতীশ-আসরানির কৌতুক চরিত্রের স্মৃতি রোমন্থন করে শোক প্রকাশের ভিড় নেটদুনিয়ায়। এযাবৎকাল পর্দায় যাদের উপস্থিতি দর্শকের মুখে হাসি ফুটিয়েছে, সেই অভিনেতাদের প্রয়াণে অশ্রু বাঁধ মানছে না অনুরাগীদের। কারও আক্ষেপ, বর্তমান প্রজন্মের অভিনেতারা আসরানি-সতীশদের মতো ‘কমিক টাইমিং’-এ দক্ষ নন। কেউ বা প্রয়াত দুই তারকাকে মিলিয়ে দিয়ে বললেন, ‘হয়তো স্বর্গলোকে কৌতুক জলসা মাতাচ্ছেন সতীশ-আসরানিরা।’ কারও বা মন্তব্য, ‘বলিউড ইন্ডাস্ট্রির জন্য সবচেয়ে খারাপ সপ্তাহ।’ কেউ বা সতীশ-আসরানির প্রয়াণে ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসকে ‘অভিশপ্ত’ বলে দুঃখ প্রকাশ করলেন। এহেন নানা কমেন্টে ছেয়ে গেছে নেটভুবন। আসরানি এবং সতীশ শাহের বয়সের ফারাক ১০ বছর হলেও অভিনয়গুণে খুব স্বল্প সময়েই দর্শকমহলের প্রিয় উঠেছিলেন এই দুই অভিনেতা। পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে সিনে দুনিয়ায় রাজত্ব করা গোবর্ধন আসরানি তার ক্যারিয়ারে ৩৫০টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। ‘মেরে আপনে’, ‘কোশিস’, ‘বাওয়ারচি’, ‘পরিচয়’, ‘অভিমান’, ‘চুপকে চুপকে’ ‘ছোটি সি বাত’, ‘রাফু চক্কর’-এর মতো আইকনিক সিনেমায় দর্শকের মন জয় করেছিলেন আসরানি। মূল চরিত্রে অভিনয়ে প্রশংসা কুড়ানোর পাশাপাশি পার্শ্বচরিত্রেও বাজিমাত করেছিলেন তিনি। বিশেষ করে তার ‘কমিক টাইমিং’ অভিনয় শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাকরণসম। কৌতুক অভিনেতা হিসেবে আসরানি যে একাধিক ‘সিনেমার মেরুদন্ড’ হয়ে উঠেছিলেন, তা বললেও অত্যুক্তি হয় না। অন্যদিকে বিগত চার দশকের অভিনয় ক্যারিয়ারে সতীশ শাহ যেমন টেলি দর্শকমহলে ‘কাছের মানুষ’ হয়ে উঠেছিলেন, ঠিক তেমনই বিভিন্ন সময়ে সিনেপর্দায় শাহরুখ-সালমানের মতো তাবড় তারকাদের মাঝেও নিজস্ব অভিনয়গুণে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। ১৯৮৩ সালে কুন্দন শাহের স্যাটায়ার জঁরের ছবি ‘জানে ভি দো ইয়ারো’ সিনেমায় অভিনয় করে সাড়া ফেলেন। পরবর্তীতে ‘ম্যায় হুঁ না’, ‘কাল হো না হো’, ‘কভি হাঁ কভি না’, ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ থেকে ‘ওম শান্তি ওম’-এর মতো একাধিক সুপারহিট সিনেমায় নজর কেড়েছেন। ‘সারাভাই ভার্সেস সারাভাই’ ধারাবাহিকে তার অভিনীত ইন্দ্রবদন সারাভাইয়ের চরিত্রটি ভারতীয় টেলি দুনিয়ার ইতিহাসে অন্যতম আইকনিক কমিক চরিত্র হিসেবেই রয়ে যাবে। শনিবার বিকালে অভিনেতার প্রয়াণের খবর প্রকাশ্যে আসতেই শোকের ছায়া বলিউডে।