ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষের পথে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ প্রস্তুতিমূলক কাজ হয়ে গেছে। রাজনৈতিক দল ও পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন সম্পন্ন হলেই প্রস্তুতি শতভাগ হবে। ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোট কেন্দ্র নির্ধারণ করার কথা জানিয়েছে ইসি। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) নিজস্ব বিবেচনায় প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে চলতি সপ্তাহেই আদেশ জারি করবে ইসি। এখন পর্যন্ত গণভোট সম্পর্কিত কোনো তথ্য ইসিতে নেই। গতকাল আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘আমরা চূড়ান্তভাবে ভোট কেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত করেছি। ৬৪ জেলার ৩০০ সংসদীয় আসনে কেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার ৭৬১। কক্ষ ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৯। এর মধ্যে পুরুষের জন্য ১ লাখ ১৫ হাজার ১৩৭ এবং মহিলাদের জন্য ১ লাখ ২৯ হাজার ৬০২টি কক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে।’
প্রাথমিকভাবে ১৪টি অস্থায়ী ভোট কেন্দ্র নির্ধারণ করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, একটি ভোট কেন্দ্রে গড়ে ৩ হাজার ভোটার থাকবে। এটিকে ‘ক্যাচমেন্ট এরিয়া’ হিসেবে ধরা হয়েছে। ভোট ব্যবস্থাপনায় পরবর্তীতে প্রয়োজনে এ সংখ্যা সামঞ্জস্য করা হবে। ১০ সেপ্টেম্বর খসড়া ভোট কেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এরপর ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খসড়া নিয়ে দাবি বা আপত্তি গ্রহণ করা হয়, যা নিষ্পত্তি করা হয় ১২ অক্টোবর। এরপর কেন্দ্রের সম্ভাব্য তালিকা ২০ অক্টোবর চূড়ান্ত করা হয়। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ৮(১) ও ৮(২) অনুযায়ী কেন্দ্রের তালিকা সংরক্ষণ ও চূড়ান্ত করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ২৫ দিন আগে গেজেট প্রকাশ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
জোটে ভোট করলেও নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে, এমন বিধানসংবলিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অধ্যাদেশে গত বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। তবে এ বিধান নিয়ে আপত্তি তুলে জোটভুক্ত যে কোনো দলের প্রতীকে ভোট করার বিদ্যমান নিয়ম বহাল রাখার দাবি তুলেছে বিএনপি। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, বর্তমানে বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে, কমিশন পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন প্রশ্নে বিভিন্ন প্রস্তাব পাঁচটি দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করেছে ইসি, যেগুলো স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য, ভাষাগত বা সংখ্যাগতভাবে সামান্য সংশোধনযোগ্য, রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া সম্ভব নয়, বিদ্যমান আইনে পর্যাপ্তভাবে নির্ধারিত এবং কমিশনের নিজস্ব বিবেচনায় সংশোধনযোগ্য। এ পাঁচটি দিক বিবেচনা করেই সংশোধন প্রস্তাবটি উপদেষ্টা পরিষদে পাঠানো হয়েছে এবং তারা নীতিগত সম্মতি দিয়েছেন।
সেপ্টেম্বরে রাজনৈতিক দল নিবন্ধন এবং মধ্য অক্টোবরে পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করেছিল ইসি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী দুটি বিষয়ে কিছুটা পিছিয়ে আছে কমিশন। একটি হলো রাজনৈতিক দল নিবন্ধন, অন্যটি পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধন। ২২টি রাজনৈতিক দলকে আমরা প্রাথমিকভাবে বিবেচনাযোগ্য মনে করেছি। এদের বিষয়ে মাঠপর্যায়ে অতিরিক্ত কিছু তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ইনশাল্লাহ এ সপ্তাহের মধ্যেই তা সম্পন্ন করতে পারব।’
নির্বাচন প্রস্তুতি কতটা এগিয়েছে-এমন প্রশ্নে ইসি সচিব আখতার বলেন, ‘যদি শতকরা হিসাবে বলেন, তাহলে বলতে পারি আমরা এখন ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ প্রস্তুত। রাজনৈতিক দল ও পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন এ সপ্তাহে সম্পন্ন হলে প্রস্তুতি শতভাগে পৌঁছাবে।’
এদিকে এনসিপি নির্বাচনি প্রতীক হিসেবে কাঙ্ক্ষিত ‘শাপলা’ না পেলে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবে বলে রবিবার হুঁশিয়ারি দেন দলটির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘কমিশন ইতোমধ্যে তাদের অবস্থান জানিয়েছে। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো বিকল্প প্রস্তাব কমিশনের কাছে আসেনি। এখনো কমিশন আগের অবস্থানে আছে।’ কমিশন নিজস্ব বিবেচনা অনুযায়ী দলটিকে প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে চলতি সপ্তাহেই আদেশ জারি করবে বলেও জানান তিনি। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে এনসিপির দাবির বিষয়ে আখতার আহমেদ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। রাজনৈতিক বিষয় কমিশনের এখতিয়ারের বাইরে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সাংবিধানিক দায়িত্বের জায়গা থেকে কাজ করছি। সবাই সহযোগিতা করলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।’ গণভোটের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ইসি সচিব বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনে এখন পর্যন্ত গণভোট সম্পর্কিত কোনো তথ্য আসেনি। তাই অনুমানভিত্তিক কোনো মন্তব্য করা উচিত নয়। যে বিষয়টি কমিশনে আনুষ্ঠানিকভাবে আসেনি, সে বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।’