করোনার টিকা প্রদানের কার্যক্রম ত্বরান্বিত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমণ এবং হাসপাতালে ভর্তির হার গত দু’সপ্তাহ যাবত কমলেও দৈনিক মৃত্যুর হার এখনও অন্য যে কোন দেশের চেয়ে অনেক বেশী। জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহের চেয়ে চতুর্থ সপ্তাহে করোনায় আক্রান্তের হার কমেছে ১৭%। হাসপাতালে ভর্তির হারও কমেছে ১০%। তবে মৃত্যু বেড়েছে ৭% এবং সে সংখ্যা হচ্ছে ২২৭৯৭।
কোভিড ট্র্যাকিং প্রজেক্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এমন অবস্থায় ৩০ জানুয়ারি থেকে গণপরিবহন অর্থাৎ বাস, রেল, বিমানে মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফেডারেল ভবন, পার্ক, স্টেশন, এয়ারপোর্ট, বাণিজ্যিক কেন্দ্রেও মাস্ক বাধ্যতামূলক। আগে থেকেই গ্রোসারি স্টোর, বিভিন্ন পণ্যের স্টোরেও ‘নো-মাস্ক নো সার্ভিস’ চালু রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ স্টেটের রেস্টুরেন্ট, বারের ভেতরে খাবারের অনুমতি নেই। বাইরে বসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে খাবারের অনুমতি রয়েছে।
এদিকে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণের সংখ্যা আরো কদিন বাড়বে বলে চিকিৎসা-বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন। সবচেয়ে বেশী আকান্ত এবং মৃত্যু হয়েছে নিউইয়র্কে। এই স্টেটের গভর্ণর এ্যান্ড্রু ক্যুমো রবিবার বলেছেন, টেস্টে পজিটিভ রেজাল্ট আসার ঘটনা কমেছে টানা ২৩দিন যাবত। থ্যাঙ্কসগীভিং, বড়দিন এবং ইংরেজী নতুন বছর উপলক্ষে বেপরোয়া হয়ে পড়ার খেসারত দিতে হচ্ছে এখনও। এসব বিষয় খেয়ালে রেখে সামনের দিনে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে সকলকে।
এদিকে জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী রবিবার পর্যন্ত দুই কোটি ৬০ লাখ আমেরিকান আক্রান্ত এবং মারা গেছে ৪ লাখ ৪০ হাজারের অধিক মানুষ। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১৪ ডিসেম্বর থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩ কোটি ১৮ লাখ আমেরিকান টিকা নিয়েছেন। দৈনিক টিকা প্রদানের হার হচ্ছে ১.৩৫ মিলিয়ন ডোজ। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশী নিয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়া-৩৪৩৪২৯৫। দ্বিতীয় শীর্ষে রয়েছে টেক্সাস-২৪০৮৮৭৯। নিউইয়র্ক-১৮৯৩৬০৮। টিকা প্রদানে বাইডেন প্রশাসনের দৈনিক টার্গেট হচ্ছে ১৫ লাখ ডোজ। এই ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে গ্রীষ্মের মধ্যে সকল আমেরিকানের টিকা নেয়া সম্ভব হবে।
এমন অবস্থায় মহামারী নিয়ে পূর্বাভাস দিয়ে আসা ‘ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন’র গবেষক দল নতুন ভয়াবহ পূর্বাভাস দিয়েছে যে, এখন থেকে আগামী ১ মে’র মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ এ আরও ‘প্রায় দুই লাখ মানুষ মারা যেতে পারে।’ বর্তমানে মহামারীর যে পরিস্থিতি, তাতে যদি আমেরিকার সব মানুষ মহামারী প্রতিরোধের সব নিয়ম মেনে চলে তারপরও ১ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হবে। অর্থাৎ, যদি সবাই মাস্ক পরে, ভিড় এড়িয়ে চলে এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখে তারপরও আগামী তিন মাসে অন্তত আরও এক লাখ ৩০ হাজার মানুষ কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা যাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ‘দ্য ইন্সটিটিউট ফর হেল্থ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড এভাল্যুয়েশন’।
ওদিকে, করোনাভাইরাসের অতি-সংক্রামক এবং ‘সম্ভবত অধিক প্রাণঘাতী’ ধরনটিও এসেছে যুক্তরাষ্ট্রে। ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা আগেই অবশ্য করোনাভাইরাসের রূপ বদল নিয়ে সতর্ক করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে ভাইরাসের নতুন আরও দুইটি ধরন ছড়িয়েছে।এগুলো এসেছে ব্রাজিল এবং আফ্রিকা থেকে। ‘ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস’ এর পরিচালক ড. অ্যান্থনি ফাউসি বলেছেন, ‘‘এই ভাইরাস নির্দিষ্টভাবে বিকশিত এবং পরিবর্তিত হতে থাকবে।”
বিডি প্রতিদিন/হিমেল