শুক্রবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

কুমিল্লায় পেট্রলবোমায় আট নিহতের ঘটনায় শিগগিরই চার্জশিট

কুমিল্লা প্রতিনিধি

২০ দলীয় জোটের ডাকা দেশব্যাপী লাগাতার হরতাল-অবরোধ চলাকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের জগমোহনপুরে বাসে পেট্রলবোমা হামলায় ৮ যাত্রী নিহত হওয়ার ঘটনার আজ দুই বছর। শিগগিরই এ মামলায় চার্জশিট দেওয়া হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ইতোমধ্যে মামলায় অভিযুক্ত ১২ জনসহ ২৫ জনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে হরতাল-অবরোধ চলাকালে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আইকন পরিবহনের একটি নৈশ কোচ (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৪০৮০) ৩ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার ভোর রাত সাড়ে ৩টার দিকে চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজারসংলগ্ন জগমোহনপুর নামক স্থানে বাসটি লক্ষ্য করে পেট্রল বোমা নিক্ষেপ করে নাশকতাকারীরা। এ সময় বাসে ঘুমিয়ে থাকা যাত্রীরা আগুনে পুড়ে ঘটনাস্থলে সাতজন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরো একজন মারা যান। নিহতরা হলেন, যশোরের গণপূর্ত বিভাগের ঠিকাদার জেলা সদরের ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের বাসিন্দা হাজী রুকনুজ্জামানের ছেলে নুরুজ্জামান পাপলু (৫০), তার একমাত্র মেয়ে যশোর পুলিশ লাইন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী মাইশা তাসলিম (১৪), কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার গাইনাকাটা গ্রামের মৃত ছিদ্দিক আহম্মদের ছেলে আবু তাহের (৩৮) ও একই গ্রামের সালেহ আহম্মদের ছেলে আবু ইউসুফ (৪৫), নরসিংদীর পলাশ উপজেলার বালুরচর পাড়ার জসিম উদ্দিন মানিকের স্ত্রী আসমা আক্তার (৩৮) ও তার ছেলে মাহমুদুল হাসান শান্ত (১৩), শরীয়তপুর জেলার ঘোষেরহাট থানার দক্ষিণ গজারিয়া গ্রামের মৃত নজরখার ছেলে ওয়াসিম (৩৫)। এ ঘটনায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় ৫ নেতাকে হুকুমের এবং জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা চৌদ্দগ্রামের সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরকে প্রধান আসামি করে জামায়াত-বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করা হয়। মামলা দুটির বাদী চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই নুরুজ্জামান হাওলাদার। দুটি মামলাতেই খালেদা জিয়া ও ডা. তাহের ছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, যুবদলের কেন্দ্রীয় সদস্য কামরুল হুদা, উপজেলা জামায়াতের আমীর সাহাব উদ্দিন, সেক্রেটারি শাহ মিজানুর রহমান, উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি তোফায়েল হোসেন জুয়েল, শিবির সভাপতি সাহাব উদ্দিন পাটোয়ারীসহ ৫৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়। আসামিদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে শাহাবুদ্দিন নামের এক শিবির নেতা এবং সড়ক দুর্ঘটনায় সোহেল নামে এক আসামি মারা গেছেন বলে পুলিশ জানায়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই মো. ইব্রাহীম জানান, সাত নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্ত না করায় পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে ওই বছরের ২১ নভেম্বরে কক্সবাজারের ইউসুফ ও রাশেদুল ইসলামের মরদেহ, ২০১৬ সালের ২১ জানুয়ারি যশোরের নুরুজ্জামান পাপলু ও তার মেয়ে মাইশা, ২ ফেব্রুয়ারি শরীয়তপুরের ওয়াসিমের মরদেহ এবং ১ মার্চ নরসিংদীর আসমা ও শান্তর মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। মরদেহ উত্তোলন করতে গিয়ে মামলার তদন্তে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবে এরই মধ্যে নিহতদের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। আসামিদের বিরুদ্ধে তথ্যভিত্তিক যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই চার্জশিট দাখিল করা হবে। চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি মো. আবুল ফয়সল জানান, আলোচিত এ মামলাটির তদন্ত শেষ পর্যায়ে। চার্জশিট কিছুদিনের মধ্যেই হতে পারে বলে তিনি জানান।

সর্বশেষ খবর