রবিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

নওগাঁয় ট্যুরিস্ট বাস সার্ভিস

নওগাঁ প্রতিনিধি

ইতিহাস ও ঐতিহ্যে ভরা উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁ। জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে প্রায় অর্ধশতাধিক ঐতিহাসিক স্থাপনা। পরিবার-পরিজন নিয়ে পর্যটকদের পক্ষে এক দিনে একাধিক ঐতিহাসিক স্থান দর্শন করা সম্ভব নয়। তাই স্বল্প খরচে এক দিনে একাধিক ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো ভ্রমণের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই প্রথম ট্যুরিস্ট বাস সার্ভিস চালু হতে যাচ্ছে। এতে করে আনন্দিত নওগাঁবাসী। ইতোমধ্যেই টিকিট বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। এ ট্যুরিস্ট বাস সার্ভিসে বদলে যাবে প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকার আর্থ সামাজিক অবস্থা, এমনটাই আশা করছেন সচেতন মহল। জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান জানান, নওগাঁর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোকে দেশসহ বিশ্বের পর্যটকদের কাছে নতুন করে তুলে ধরতেই এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নওগাঁর ইতিহাসে এই প্রথম আসন্ন ঈদুল ফিতরের দ্বিতীয় দিন আনুষ্ঠানিকভাবে ট্যুরিস্ট বাস সার্ভিসের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। উদ্বোধনের পর প্রতিদিন ট্যুরিস্ট বাস শহরের মুক্তির মোড় থেকে সকাল ৯টায় যাত্রা শুরু করবে। মুক্তির মোড়ের পদ্মা বাস কাউন্টার থেকে এ প্যাকেজের টিকিট পাওয়া যাবে। প্রাথমিক পর্যায়ে জেলা প্রশাসনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের পক্ষ থেকে একটি বাস প্রস্তুত করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ৪৫০ টাকার একটি প্যাকেজ প্রস্তুত করা হয়েছে।

 এ প্যাকেজের মাধ্যমে একজন পর্যটক খুব সহজেই প্রথমে ভারত সীমান্তঘেঁষা উপজেলা ধামইরহাট উপজেলার জাতীয় উদ্যান শালবন বিহারের আলতাদীঘি, ঐতিহাসিক জগদ্দল বিহার, বদলগাছী উপজেলার ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার ও হলুদ বিহার ভ্রমণ করতে পারবেন। এ ছাড়া প্যাকেজের মাধ্যমে ভ্রমণরত পর্যটকরা সকাল ও বিকালের নাস্তা এবং দুপুরের খাবার পাবেন। বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে প্রতিবার ভ্রমণের দিন বিকালে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারে স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবেন। এরপর হলুদ বিহার দর্শন শেষে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড়ে এসে শেষ হবে ওইদিনের ভ্রমণ। প্রাথমিক পর্যায়ে চারটি ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের রুট হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে পর্যটকদের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে জেলার সব ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের জন্যও প্যাকেজ তৈরি করা হবে। পর্যটকরা এ ভ্রমণের ফলে জেলার বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত হাজার হাজার বছর আগের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো সম্পর্কে নতুন করে জানার সুযোগ পাবেন। তিনি আরও জানান, এ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে বেশি বেশি পর্যটকের আগমনের ফলে ওইসব স্থানের আর্থসামাজিক অবস্থার আরও উন্নত হবে। চাঙ্গা হয়ে উঠবে বাণিজ্যিকব্যবস্থা। নতুন নতুন উদ্যোক্তার মাধ্যমে গড়ে উঠবে নতুন নতুন স্থাপনা আর সৃষ্টি হবে স্থানীয়দের কর্মসংস্থান। আমূল পরিবর্তন আসবে এ পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে গড়ে ওঠা আর্থ সামাজিক ব্যবস্থায়। বদলে যাবে স্থানীয় মানুষদের জীবনযাপনের পদ্ধতি আর সরকারের বাড়তি রাজস্বও আয় হবে। শহরের বাসিন্দা অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, এমন উদ্যোগ নওগাঁবাসীর জন্য সত্যিই খুবই আনন্দের। এমন উদ্যোগের কথা নওগাঁর ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ইচ্ছা থাকলেও অনেক মানুষের পক্ষে ব্যক্তিগতভাবে গাড়ি ভাড়া করে পরিবার-পরিজন নিয়ে একসঙ্গে এতগুলো নিদর্শন ভ্রমণ করা সম্ভব নয়। কিন্তু এখন একটি প্যাকেজের মাধ্যমে খুব সহজেই ঐতিহাসিক চারটি পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমণ করতে পারবেন। শুধু এ চারটি কেন্দ্রই নয় এটির ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আগামীতে যেন অন্যান্য রুটেও এ সার্ভিস চালু করা হয়। ধামইরহাটের আলাতাদীঘির বনবিট কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, নিঃসন্দেহে এটি একটি মহৎ উদ্যোগ। কথায় আছে জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করতে হলে আগে নিজের এলাকার ঐতিহাসিক পর্যটন কেন্দ্রগুলো ভ্রমণ করা উচিত। তাই পর্যটকরা আলতাদীঘিতে এলে জাতীয় উদ্যানসহ ভারতের সীমান্তও পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। এতে করে এ অঞ্চলের সবকিছুতেই উন্নয়নের ছোঁয়া স্পর্শ করবে। এ সার্ভিসের মাধ্যমে পর্যটকে মুখরিত হবে নওগাঁর প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানসমূহ, পাশাপাশি সরকার অর্জন করতে পারবে অতিরিক্ত রাজস্ব। জেলার ঐতিহাসিক কুসম্বা মসজিদ, রবিঠাকুরের কাচারিবাড়ি পতিসর, বলিহার, দুবলহাটি রাজবাড়ীসহ অন্য ঐতিহাসিক স্থানগুলো ভ্রমণেও যেন আধুনিক মানের এমন সহজ বাস সার্ভিস চালু করে নওগাঁর ইতহাস ও ঐতিহ্যকে নতুন করে ভ্রমণপিপাসুদের কাছে তুলে ধরতে এমন উদ্যোগ সারা বছরই চালু রাখা হয় এমনটিই দাবি নওগাঁবাসীর।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর