শনিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

হলুদ তরমুজ চাষে ভাগ্য খুলেছে কৃষকের

জয়পুরহাট প্রতিনিধি

হলুদ তরমুজ চাষে ভাগ্য খুলেছে কৃষকের

জয়পুরহাটে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মাচা পদ্ধতিতে বিদেশি বিভিন্ন জাতের বারোমাসি তরমুজের চাষ। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় অন্য ফসল বাদ দিয়ে তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। বিঘাপ্রতি ৫০ হাজার টাকা খরচ করে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে প্রায় ২ লাখ টাকা পর্যন্ত। এতে ব্যাপক লাভবানের পাশাপাশি বেকারত্ব দূর হচ্ছে শত শত যুবকের। কৃষকরা বলছেন, এ তরমুজ চাষে সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে একদিকে যেমন কৃষকরা লাভবান হবেন, অন্যদিকে সারা বছর সুস্বাদু এ ফল খেতে পারবে সাধারণ মানুষ। ২০১৮ সালে সর্বপ্রথম জেলার পাঁচবিবি উপজেলার ভাড়াহুত গ্রামের কৃষক আবু মুসা মাত্র আড়াই শতক জমিতে মাচায় ব্ল্যাকবেবি ও মধুমালা তরমুজ চাষ শুরু করেন। ৫ হাজার টাকা খরচ করে এই তরমুজের চাষ করে ৭০ দিনে লাভ হয় ২২ হাজার টাকা। পরে তার সাফল্য দেখে ছড়িয়ে পড়ে এ চাষ। বর্তমানে জয়পুরহাট সদর, পাঁচবিবি, আক্কেলপুর ও কালাই উপজেলার ৬৫টি গ্রামের ৩ শতাধিক কৃষক তৃপ্তি, ডায়না, সুগার কুইনসহ বিভিন্ন জাতের তরমুজ চাষ করছেন। এসব জাতের বেশির ভাগ তরমুজ চায়না, থাইল্যান্ড ও তাইওয়ানের। বাজারমূল্য ভালো হওয়ায় ধানসহ অন্যান্য ফসল বাদ দিয়ে এ চাষে ঝুঁকে পড়ছেন কৃষকরা।  খেতে সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে এর চাহিদাও বাড়ছে দিন দিন। বর্তমানে এ তরমুজ  জেলার চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে রাজধানী ঢাকা, রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, রাজশাহী, বগুড়া, নওগাঁসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

জেলার প্রথম তরমুজ চাষি পাঁচবিবি উপজেলার ভাড়াহুত গ্রামের আবু মুসা বলেন, একটি  বেসরকারি এনজিওর পরামর্শে তিনি ২০১৮ সালে জেলার সর্বপ্রথম আড়াই শতক জমিতে  তরমুজ চাষ শুরু করেন।  বর্তমানে তিন বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করছেন তিনি। অসময়ে এ তরমুজ চাষ দেখে  প্রথমে অনেকেই হাসাহাসি করেছেন। কিন্তু তরমুজের ফলন ভালো, স্বাদ ও দাম ভালো হওয়ায় এখন অনেকেই চাষ করতে পরামর্শ নিতে আসেন। তিনি আরও বলেন, আমার মতো এখন অনেকেই এসব বিদেশি জাতের তরমুজের চাষ করছেন। অসময়ের এই তরমুজ দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন দর্শনার্থীরা এক নজর দেখতে আসেন। আবার কেউ কেউ এসে জমি থেকে টাটকা তরমুজ কিনেও নিয়ে যান। কৃষক রেজুয়ান হোসেন বলেন, আমার এক বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ৪৫ হাজার টাকা। এবার বাজারে চাহিদা ও দাম ভালো রয়েছে। আমি এক বিঘা জমির তরমুজ ২ লাখ টাকার কাছাকাছি বিক্রি করেছি। সদর উপজেলার ধলাহার গ্রামের কৃষক আতিকুল ইসলাম বলেন, ধান-আলুর চেয়ে এ তরমুজ চাষ অনেক লাভজনক ফসল। আমি এ বছর ১ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে দেড় লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি। জমিতে আরও তরমুজ আছে সেগুলোও বিক্রি করব। ভুতগাড়ী গ্রামের সোহেল রানা বলেন, কৃষি অফিস থেকে কোনো অফিসার আমাদের কাছে আসে না। তাই তরমুজ গাছের কোনো রোগ হলে আমরা বেকায়দায় পড়ি। কালাই উপজেলার খুশাল নওপাড়া গ্রামের কৃষক নুর মুহাম্মদ বলেন, বীজ রোপণের ৩৫ দিনের মধ্যে গাছ মাচায় উঠে যায়। ৪০ দিনের মধ্যে গাছে প্রচুর ফুল ও কুঁড়ি আসে। তারপর ৭৫ দিনের পরিপক্ব হয়ে মাচায় ডগায় ডগায় ঝুলে আছে আড়াই থেকে ৩ কেজি ওজনের প্রায় ২৪০০ তরমুজ। ওই তরমুজ কাটলে ভিতরে লাল টুকটুকে, রসালো আর খেতে মিষ্টি ও খুব সুস্বাদু। তিনি আরও বলেন, আশা করছি এই মাসেই সব তরমুজ বিক্রি হবে। বর্তমান বাজারে এই তরমুজের চাহিদা অনেক বেশি, দামও ভালো আছে। প্রতিটি তরমুজ গড়ে ১০০ টাকায় বিক্রি হবে। এতে সব খরচ বাদ দিয়ে আমার আয় হবে প্রায় ২ লাখ টাকারও বেশি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, জেলায় প্রায় ৪০০ বিঘার বেশি জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। লাভজনক এ চাষ আরও বাড়াতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কারিগরি সহায়তাসহ সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর