শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটে জিম্মি অটোরিকশা চালকরা

শ্রমিক ইউনিয়নের নাম ভাঙিয়ে কোটি টাকা লোপাট

মোশাররফ হোসেন বেলাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটে জিম্মি অটোরিকশা চালকরা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মেড্ডা এলাকায় অটোচালকের কাছ থেকে চাঁদা তুলছেন এক ব্যক্তি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শ্রমিক ইউনিয়নের নাম ভাঙিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের জিম্মি করে প্রতিদিন চলছে চাঁদাবাজি। সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে থাকা সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে আদায় করা হচ্ছে চাঁদা। শ্রমিক ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ পদধারী এবং তাদের লাঠিয়াল বাহিনী এ কাজে নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। বছরে তারা লোপাট করছে ৩ কোটি টাকার বেশি। শ্রমিকের কল্যাণের কথা বলে চাঁদা নেওয়া হলেও তা যাচ্ছে সিন্ডিকেটের পকেটে। জানা যায়, জেলার কসবা-নবীনগর, মেড্ডা-সরাইল-নাসিরনগর সড়ক ও আশুগঞ্জসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কে ১৪ হাজারের অধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে। এসব সড়কে চলাচল করতে চালকদের প্রতিদিন দিতে হচ্ছে চাঁদা। ব্যত্যয় ঘটলে সিরিয়াল না দেওয়াসহ কোনো সড়কেই তাদের চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে চালকরা বাধ্য হন চাঁদা দিতে। সূত্র জানায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিএনজিচালিত অটোরিকশা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি. নম্বর-চট্ট. ২৫২৮) এর কাউতলী শাখার সভাপতি আইয়ুব মিয়া এবং সহসভাপতি সুমন মিয়ার তত্ত্বাবধানে প্রতিদিন ১২০০ গাড়ি থেকে রিসিট দিয়ে ২০ টাকা করে আদায় করা হয়। একই শ্রমিক ইউনিয়ন পুরাতন জেলখানার মোড় শাখার নেতা মহসিন মিয়ার তত্ত্বাবধানে ২০ টাকা করে নেওয়া হয় ৮০০ গাড়ি থেকে। শুধু তাই নয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা (সিএনজি) অটোরিকশা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের (রেজি. নম্বর-চট্ট. ২৫২৮) সভাপতি হেবজুল করিম এবং যুগ্ম সম্পাদক দেওয়ান মিয়ার বিরুদ্ধেও চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। সূত্রমতে, তাদের শ্রমিক ইউনিয়নের দায়িত্বশীল পদে থাকা এই দুই ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে প্রতিদিন ৭০০ অটোরিকশা থেকে কথিত রিসিট দিয়ে ২০ টাকা করে আদায় করা হয়। একই ধরনের চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সিএনজিচালিত অটোরিকশা পরিবহন মালিক সমিতির (রেজি. নম্বর-চট্ট. ১৮৭১) বিরুদ্ধেও। এ সংগঠনের সহসাধারণ সম্পাদক মানিক মিয়ার তত্ত্বাবধানেও রিসিট ছাড়া চাঁদা তোলা হয় বলে জানা গেছে। একই সংগঠনের প্রধান কার্যালয় পূর্ব মেড্ডা অটোরিকশা টার্মিনালের সমাজ কল্যাণ সম্পাদক হামিদ বক্সের শেল্টারে রিসিট ছাড়াই টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সূত্রমতে, প্রতি মাসে জেলায় বিভিন্ন সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ড থেকে ২৯ লাখ ১০ হাজার টাকা চাঁদা ওঠে। এ টাকা থেকে কর্মচারীদের বেতন, কার্যালয়ের খরচ মেটানোসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদেরও মাসোহারা দেওয়া হয়। এতে সব মিলিয়ে মাসে খরচ হয় ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা। খরচ বাদে প্রতি মাসে তোলা চাঁদার ২৪ লাখ ৮০ হাজার অবশিষ্ট থাকে। যা জেলা সিএনজি অটোরিকশা পরিবহন মালিক সমিতি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে সমান ভাগ করা হয়। সেখান থেকে জেলা সিএনজি অটোরিকশা পরিবহন মালিক সমিতির ২১ জন কার্যকরী সদস্যের মধ্যে ২ হাজার টাকা করে দেয়। বাকি ১১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা জমা থাকে সংগঠনের সভাপতি মিজানুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুসের কাছে। একইভাবে চাঁদার টাকা বণ্টন করা হয় জেলা সিএনজিচালিত অটোরিকশা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন কার্যকরী সদস্য এবং সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে। জেলা সিএনজি অটোরিকশা পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস জানান, এসব টাকা দিয়ে সংগঠনের বিভিন্ন প্রয়োজন মেটানো হয়। অফিসে আসেন সব কথা মোবাইল ফোনে বলা যাবে না। অটোরিকশা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি হেবজুল করিম বলেন, সংগঠনের রশিদে লেখা আছে টাকা কী কী কাজে ব্যয় হয়।

সর্বশেষ খবর