মানিকগঞ্জে হরিজন সম্প্রদায়ের লোকেরা যুগ যুগ ধরে চরম আবাসন সংকটে ভুগছে। তারা বাস করছে ময়লা-আবর্জনায় ভরা ঘন বসতি এলাকায়। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতেও রয়েছে এসব মানুষ। পৌর এলাকায় পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে কাজ করেন এ সম্প্রদায়ের লোকেরা।
জানা গেছে, পৌরসভার দাশড়া এলাকায় মাত্র ১৩ শতাংশ জমির মধ্যে ৬০টি পরিবার কয়েক শত সদস্য নিয়ে বসবাস করে আসছেন যুগের পর যুগ। তারা বংশ পরম্পরায় এখানেই বসবাস করে। ঘনবসতি হওয়ায় কলোনিজুড়ে অস্বাস্থ্যকর অবস্থা বিরাজ করছে। অন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা জোটেনি তাদের ভাগ্যে। কয়েক বছর আগে সারা দেশের পৌর এলাকার পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে অনেক পৌর এলাকায় আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। কিছু স্থানে এ কাজ চলমান। কিন্তু মানিকগঞ্জে এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না, অভিযোগ হরিজন কলোনির লোকজনের।
এখানকার বাসিন্দা জ্যোৎস্না জমাদারনী বলেন, আমাদের কলোনির পরিবেশ এত খারাপ যে এখানে কেউ ছেলে-মেয়ে বিয়ে দিতে চায় না। সব কিছু ঠিক থাকলেও শুধু নোংরা পরিবেশের কারণে সম্বন্ধ ভেঙে যায়। একটু বৃষ্টি হলেই থাকার ঘর, উঠান পানিতে ডুবে যায়। নোংরা ময়লা পানিতে সব একাকার হয়ে যায়। এসব নোংরা পানি ভেঙে বাথরুম ও ঠাকুর ঘরে যেতে হয়। শিক্ষার্থী পুনম হরিজন জানান, নোংরা অবস্থার জন্য কোনো বন্ধুবান্ধব আমাদের বাড়িতে আসে না। কোনো অনুষ্ঠানে বন্ধুদের নিমন্ত্রণ করলে গালমন্দ শুনতে হয়। সদ্য বিয়ের পর শ্বশুর বাড়িতে এসেছেন দিপীকা রানী হরিজন। তিনি বলেন, এখানকার অবস্থা এত খারাপ যে বাবার বাড়ির কেউ দেখতে পর্যন্ত আসেন না। হরিজন ঐক্য পরিষদ মানিকগঞ্জের সভাপতি রিপন জমাদার জানান, সরকারিভাবে সব পৌর এলাকায় পরিচ্ছন্ন কর্মীদের বাসভবন নির্মাণ হচ্ছে। কিন্তু আমাদের এখানে এর কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না। মাত্র ১৩ শতাংশ জায়গার মধ্যে ৬০টি পরিবার বাস করছে। তাদের ছেলে সন্তান নিয়ে ৩০০-এর বেশি সদস্য রয়েছে। পৌর মেয়র মো. রমজান আলী বলেন, পরিচ্ছন্ন কর্মীদের (হরিজন সম্প্রদায়) বসবাসের জন্য জমি অধিগ্রহণসহ দুটি ভবন নির্মাণ করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০ কোটি টাকা। জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হলে ভবনের কাজ শুরু হবে।