মেঘনা নদী বেষ্টিত আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর গ্রাম। সবসময় এখানে দেশি প্রজাতির প্রচুর মাছ ধরা পড়ে। এ মাছ দিয়ে গ্রামটিতে উৎপাদন হয় শুঁটকি। নদীর তীরবর্তী স্থানে আট-দশ ফুট উঁচু বাঁশের মাচা বানিয়ে চলে শুঁটকি উৎপাদন। প্রতি বছর এখান থেকে বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ২০০ কোটি টাকার শুঁটকি মাছ। তবে এ মৌসুমে নদীতে মাছের পরিমাণ কম। তাই কমে এসেছে শুঁটকি উৎপাদন। এ কারণে ১০০ কোটি টাকার বেশি শুঁটকি বিক্রির আশা করছেন না এখানকার ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, আশুগঞ্জের লালপুর গ্রামে মেঘনা পাড়ের শুঁটকি শত বছরের ঐতিহ্য। এ গ্রামে ছোট-বড় মিলিয়ে ৭০-৮০টি ডাঙ্গি (মাচা) রয়েছে। এসব ডাঙ্গিতে সময়ভেদে ৩০০ থেকে ৪০০ শ্রমিক কাজ করেন। ২০ আড়তদারসহ প্রায় ১৫০ জন এখানে শুঁটকির ব্যবসা করেন। অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত শুঁটকি উৎপাদন কাজ চলে। লবণযুক্ত ও লবণ ছাড়া মানভেদে কয়েক ধরনের শুঁটকি উৎপাদন হয় এই পল্লীতে। সেগুলো হলো- পুঁটি, শোল, গজার, বোয়াল, গইন্না, টেংরা, চাপিলা, লাসু, পাঙাশ, রুই, পাবদা, কাইক্কা ও পুঠা মাছ। গুণেমানে ভালো ও সুস্বাদু হওয়ায় লালপুরের শুঁটকি ঢাকা, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, রাঙামাটি, খাগড়াছড়িসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এবং ভারতসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে রপ্তানি হয়। সরেজমিনে দেখা যায়, নদী থেকে মাছ ধরে জেলেরা এনে যার যার ডাঙ্গির নিচে রাখছেন। তারপর সেখানকার মহিলারা বসে পড়েন মাছ কাটতে। শুধু প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা নয়, শিশু-কিশোররাও তাদের সহযোগিতা করে। এগুলো কেটে বাঁশের মাচায় দেওয়া হয় শুকাতে। মাছগুলো কয়েকদিন ধরে শুকিয়ে তৈরি হয় শুঁটকি। তারপর এগুলো সংরক্ষণ করে শুরু হয় বাজারজাত।
ব্যবসায়ী সুকমল দাস জানান, তিন কেজি মাছ থেকে এক কেজি লবণযুক্ত ও পৌনে চার কেজি মাছ থেকে এক কেজি লবণ ছাড়া শুঁটকি হয়। চাহিদা অনুযায়ী নদীতে মাছ না পাওয়ায় ঊর্ধ্বমুখী এর দাম। ব্যবসায়ী তপন দাস বলেন, এ মৌসুমে মাছের দাম চড়া। ব্যবসায়ী লিটন চন্দ্র দাস জানান, মাছ সংকট ও অতিরিক্ত দামের কারণে উৎপাদন কমেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের কাজী আবদুল কাইয়ূম খাদেম জানান, শুঁটকি পল্লীর ব্যবসায়ীদের সহজ শর্তে ঋণের সুবিধা রয়েছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আলমগীর কবির বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং নদী ও খাল-বিলে পানি কম থাকায় এবার মাছ কম পাওয়া যাচ্ছে।
