গ্যাস সরবরাহ না থাকায় ছয় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ সার কারখানার ইউরিয়া উৎপাদন। এতে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৪ কোটি টাকার সার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সার উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে কারখানাটি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮৩ সালে চালু হওয়া কারখানাটি প্রথমদিকে দিনে ১ হাজার ৬০০ টন উৎপাদন করতে পারলেও ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে সক্ষমতা। বর্তমানে দিনে প্রায় সাড়ে ১১০০ টন ইউরিয়া সার উৎপাদন করতে পারে কারখানাটি। মূলত ইউরিয়া সার উৎপাদনে প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয় প্রাকৃতিক গ্যাস, পানি ও বাতাস। পানির জোগান দেওয়া হয় কারখানা সংলগ্ন মেঘনা নদী থেকে। আর প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করে বাখবারাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে প্রতিদিন ৬০০ পিএসআই চাপে প্রায় ৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন হয় এ সার কারখানায়। গুণগত মানসম্পন্ন হওয়ায় আশুগঞ্জ সার কারখানায় উৎপাদিত প্রিলড্ ইউরিয়া কৃষকদের কাছেও বেশ জনপ্রিয়। কারখানার আওতাভুক্ত প্রায় সাড়ে ৭০০ ডিলারের মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়াও কুমিল্লা, চাঁদপুর, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলায় সার সরবরাহ করা হয়। তবে কয়েক বছর ধরে ইউরিয়া উৎপাদনে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে আশুগঞ্জ সার কারখানা। ঘন ঘন যান্ত্রিক ত্রুটির পাশাপাশি বছরের বেশির ভাগ সময় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখার ফলে বন্ধ থাকে ইউরিয়া উৎপাদন। এর ফলে চাহিদার জোগান দেওয়া হয় আমদানি করা সার দিয়ে। এ ছাড়া উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে না পেরে লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে সার কারখানাটি। গ্যাস সরবরাহ বন্ধের কারণে সর্বশেষ ১ মার্চ ইউরিয়া উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। তার আগে গত বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকে কারখানায়। পরবর্তীতে কারখানার শ্রমিকদের দীর্ঘ আন্দোলনের পর গেল বছরের ১৫ নভেম্বর থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু করে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। পরবর্তীতে দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে গত ২৩ জানুয়ারি ইউরিয়া উৎপাদনে ফিরে আশুগঞ্জ সার কারখানা। তখন প্রতিদিন ১১০০ থেকে সাড়ে ১১০০ টন সার উৎপাদন হয়। আশুগঞ্জ সার কারখানা শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আবু কাউসার বলেন, নতুন একটি সার কারখানা করতে গেলে কম করে হলে ২০ হাজার কোটি টাকা লাগবে। অথচ আশুগঞ্জ সার কারখানা চালু রাখতে পারলেই সরকারের লাভ। এখনো প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৪ কোটি টাকার ইউরিয়া উৎপাদন করতে পারে কারখানাটি। নতুন কিছু যন্ত্রপাতি সংযোজন আর নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপ নেবে আশুগঞ্জ সার কারখানা। তিনি আরও বলেন, একটি চক্র কমিশন বাণিজ্যের জন্য সার আমদানি করত। এখনো একইভাবে দেশি কারখানাগুলো বন্ধ রেখে বিদেশ থেকে সার আমদানি করে সারের চাহিদা মেটানো হচ্ছে। অথচ দেশি সার কারখানাগুলো সচল রাখতে পারলে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। আশুগঞ্জ সার কারখানার উপ-মহাব্যবস্থাপক তাজুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, গ্যাসের সংকটের কারণে সার কারখানাগুলোতে রেশনিং করে গ্যাস দেওয়া হয়। বিগত সময়ে গ্যাস সংকটকে পুঁজি করে একটি চক্র সরকারকে সার আমদানির জন্য উদ্বুদ্ধ করত। এতে তারাও বাণিজ্য করতে পারত। তবে এখন আর সেই চক্রটি নেই। গ্যাস সংযোগ পাওয়ার পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যেই ইউরিয়া উৎপাদন শুরু করা যাবে।
 
                         
                                     
                                                             
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        