ভাদ্রের তালপাকা গরমে রংপুর অঞ্চলের প্রকৃতিনির্ভর আমন চাষিরা পড়েছেন চরম বিপদে। চলতি সেপ্টেম্বরের প্রথম ১৩ দিনে মাত্র ৪ থেকে ৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা জমি ভেজানোর জন্য পর্যাপ্ত নয়। ফলে আমন ধান বাঁচাতে কৃষকরা ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে সেচ দিয়ে চাষাবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে প্রতি একর জমিতে তাদের সেচ খরচ দাঁড়াচ্ছে ৩ হাজার টাকারও বেশি। এমন অবস্থায় মঙ্গলবার সকাল থেকে স্বস্তির বৃষ্টি শুরু হয়েছে। যদিও এই বৃষ্টি কতটা কাজে আসবে তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন কৃষকরা। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি আমন মৌসুমে রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় ৬ লাখ ২০ হাজার ৪৩০ হেক্টরেরও বেশি জমিতে আমন আবাদ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ জমিতে ইতোমধ্যে ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে এবং খেত পরিচর্যা চলছে। তবে এখনো অনেক কৃষক বৃষ্টির অপেক্ষায় রয়েছেন। রংপুর নগরীর খাসবাগ এলাকার আমন চাষি গৌরাঙ্গ রায়, আসাদুজ্জামান, আফজাল হোসেন জানান, বৃষ্টি না হলে এক বিঘা জমিতে প্রায় ২০ ঘণ্টা সেচ দিতে হচ্ছে, যার জন্য প্রতি ঘণ্টায় খরচ হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। এতে এক বিঘায় ৩ হাজার টাকারও বেশি অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে।
তবে অনেক ক্ষুদ্র চাষি আবার অর্থের অভাবে জমিতে সেচ দিতে পারছেন না। তারা কেবল আকাশের দিকে চেয়ে রয়েছেন, কবে বৃষ্টি হবে এই আশায়। কৃষকসহ অনেকে জানিয়েছেন, শুধু রংপুর বিভাগেই এবার সেচ বাবদ বাড়তি খরচ হতে পারে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। অনেক কৃষক আবার ধার-দেনা করে সেচ দিলেও নিশ্চিত হতে পারছেন না যে ধান ঠিকমতো ফলবে কি না। রংপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জনা গেছে, সেপ্টেম্বরের প্রথম ১৩ দিনে মাত্র ৪ দিন বৃষ্টি হয়েছে। মোট বৃষ্টির পরিমাণ ছিল মাত্র ৪ থেকে ৫ মিলিমিটার, যা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানান, বর্তমানে কৃষকরা আমন ধানে পরিপূরক সেচ দিচ্ছেন। যদি বৃষ্টি হয়, তবে সেচে অতিরিক্ত খরচ হবে না। এখন পুরো পরিস্থিতি নির্ভর করছে প্রকৃতির আচরণের ওপর।