২৩৮ বছর আগে তিস্তা নদী যখন গতিপথ পরিবর্তন করে তখন মহাপ্রলয় ঘটেছিল বৃহত্তর রংপুরে। সেই থেকে আজ অবধি দুর্ভোগ বয়ে বেড়াচ্ছে তিস্তা অববাহিকার পাঁচ জেলার লাখ লাখ মানুষ। কখনো এপাড় ভেঙে ওপাড় গড়ে, আবার কখনো দুই কূল উপচে প্লাবিত হয়। শুকনো মৌসুমে একটু পানির জন্য চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকে। তবে তিস্তায় এবার বন্যা মৌসুমে ভিন্ন রূপ দেখা গেছে। চার দফা বিপৎসীমা অতিক্রম করলেও ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ ছিল কম। জানা গেছে, তিস্তা নদী এবার গতিপ্রকৃতি কিছুটা বদলেছে। প্রতি বছর মধ্য জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত নদীপাড়ে বন্যা পরিস্থিতি থাকে। এবার কিছুটা ব্যতিক্রম। আগস্টে অল্প সময়ের জন্য বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে দুই দিন। সেপ্টেম্বরে পানি খুব একটা বাড়েনি। সর্বশেষ অক্টোবরে এক দফা তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলেও এর স্থায়িত্ব ছিল কম। দুই দিনের মাথায় পানি সরে গেছে। এ সময় বৃহত্তর রংপুরের ৫ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত এবং কিছু এলাকার ফসল নিমজ্জিত হলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ একেবারে কম।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, তিস্তার অতি ভাঙনপ্রবণ এলাকা রংপুরের গনাই, টেপামধুপুর, লালমনিরহাটের ৫-৭টি পয়েন্টসহ অতি ভাঙনপ্রবণ সাড়ে ১৯ কিলোমিটার এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীর তীর সংরক্ষণের কাজ করেছে। ফলে ওই সব এলাকা এবার খুব একটা ভাঙনের মুখে পড়েনি। মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছর বন্যার সময় শত শত পরিবারের বসতভিটা নদীতে চলে গেলেও এবার সেই সংখ্যা কম। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) আহসান হাবিব বলেন, এবার বন্যার আগেই অতি ভাঙনপ্রবণ এলাকাগুলোর ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ফলে এবার নদীভাঙন নেই বললেই চলে। এবার দীর্ঘমেয়াদি বন্যাও হয়নি।
রিভারাইন পিপলের পরিচালক ও নদী গবেষক বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ দীর্ঘমেয়াদি বন্যা না হওয়ার কারণ হিসেবে বলেন, এবার ভারত থেকে পানি কম এসেছে। ফলে রাতে পানি বেড়েছে, দিনে সরে গেছে। এ ছাড়া এবার নদীভাঙন খুব একটা নেই। এটা তিস্তার ইতিহাসে রেকর্ড। কারণ, অতি ভাঙনপ্রবণ এলাকায় এবার আগেভাগেই ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মাত্র ৭০-৮০ কোটি টাকা ব্যয় করে এবার ভাঙন রোধ করা সম্ভব হয়েছে। তিস্তার সুষ্ঠু পরিচর্যা হলে নদীভাঙন কমে যাবে।