বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির অধিগ্রহণ এলাকার বাইরে কয়েকটি গ্রামে মাঝেমধ্যেই প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে কেঁপে উঠছে ঘর-বাড়ি। ফাটল ধরছে নতুন নতুন ভবনে। পানি সংকট দেখা দিয়েছে। এসব কারণে গ্রামবাসীর মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে।
এসব ব্যাপার খনি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে ওই এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান ছাদেকুল ইসলাম জানান। অপরদিকে এ ধরণের সমস্যা হলে সমাধান করা হবে বলে জানিয়েছেন খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
গ্রামবাসী জানান, কয়লা খনির অধিগ্রহনকৃত এলাকার বাইরে বাঁশপুকুর, কাজিপাড়া, বৈদ্যনাথপুর, শিবকৃষ্ণপুর বৈগ্রাম, কাশিয়াডাঙ্গা, পাতিগ্রাম, পাচঁঘরিয়া ও কালুপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা এখন আতংকের মধ্যে বসবাস করছেন। রাত-দিন, যখন-তখন এ এলাকায় প্রচন্ড কম্পন হচ্ছে। কম্পনে তারা ঘরে পরিবার নিয়ে বসবাস করতে ভয় পাচ্ছেন। নতুন নতুন এলাকার ঘর-বাড়িতে ফাটল দেখা দিচ্ছে। বাড়ি ছাড়াও বাশপুকুরের মৃত মজিদ মন্ডলের পুত্র সুলতান মাহমুদের বাড়ির খোলানে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ভূগর্ভস্থ পানি দিয়ে সেচ দেয়ায় পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। ফলে হস্তচালিত টিউবওয়েলগুলো এখন অচল হয়ে পড়েছে। এ কারনে এলাকায় খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
কাঠমিস্ত্রি আব্দুল হালিম জানান, পাচঘরিয়া গ্রামের বেশীরভাগ মানুষ দরিদ্র, ভূমিহীন। আমার বড়পুকুরিয়া বাজার এলাকায় দোকান ছিল। কিন্তু খনির কারণে ওই বাজারে ফাটল ও দেবে যাওয়ায় আমার দোকান বন্ধ করে দেয়। খনি কর্তৃপক্ষ এ বাজার এলাকা অধিগ্রহণ করে ক্ষতিপুরণও দিয়েছে। এখন আমি বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে বেড়াই।
পাচঘরিয়া গ্রামের শাহিন চৌধুরী জানান, কয়লা খনির কারণে বাড়ি-ঘর ফেটে গেলেও খনি কর্তৃপক্ষ এলাকা এখনও অধিগ্রহণ করেনি। প্রশাসনের কেউও এগিয়ে আসেনি। এই গ্রামে বিদ্যুৎ নেই, খাবার পানি নেই। সব সময় মানুষ আতংকে দিন কাটাচ্ছে।
পাচঘরিয়া গ্রামের ওয়ার্ড মেম্বার মেহেরুল ইসলাম জানান, মাঝেমধ্যেই ভূমিকম্পের মত ঘর-বাড়ি কেপে ওঠে। এ সময় নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়।
শিবরামপুর গ্রামের আব্দুল জব্বার বলেন, ঘর-বাড়ি ও মাটিতে ফাটল কয়েক মাস আগে থেকে দেখা গেলেও সম্প্রতি গ্রামের পুকুর ও ডোবার পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। টিউবওয়েলে পানি উঠছে না।
ঘর-বাড়িতে ফাটলের বিষয়টি নিশ্চিত করে হামিদপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছাদেকুল ইসলাম মন্ডল জানান, এলাকার মানুষ কয়লা উত্তোলনের বিরোধিতা করে না, কিন্তু ঘর-বাড়িতে ফাটল দেখা দেওয়া ও পানি সংকটের বিষয়টি সরকারকে দেখতে হবে। গত রবিবারও খনি কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএমসিএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম আওরঙ্গজেব জানান, গ্রামবাসীর দাবির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। পূর্বের ন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা অধিগ্রহণ করে সমস্যার সমাধান করা হবে।
বড়পুকুরিয়া খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের কারণে এর আগে পার্বতীপুরের হামিদপুর ইউনিয়নের জিগাগাড়ি ও কালুপাড়া গ্রামের পুরোটা, পাতিগ্রাম, বাঁশপুকুর, বৈদ্যনাথপুর, বৈগ্রামের আংশিক এলাকার ঘর-বাড়িতে ফাটল ও ভূমিধসের সৃষ্টি হয়। গত ২০১৪ সালে খনি কর্তৃপক্ষ ওই এলাকার ৬৪৬ একর ভূমি অধিগ্রহণ করে, যেখানে বসতবাড়িও রয়েছে। খনি থেকে কয়লা উত্তোলন শুরুর পর আশপাশের এলাকায় ছাইয়ের সৃষ্টি হয় এবং ভূমিতে দেখা দেয় ফাটল। এরপর সরকার ওই এলাকার মানুষকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে অন্য স্থানে সরানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ২০১০ সালের ৯ নভেম্বর একনেকে ১৯১ কোটি টাকার একটি প্রকল্পও অনুমোদন করা হয়।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ