হাসপাতালের শয্যায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে ছোট্ট দুইটি শিশু। চার বছর বয়সী কুলসুম ও দেড় বছর বয়সী জান্নাত আপন দুই বোন। তাদের বাবা তাদেরকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। এতে গুরুতর আহত হয়েছে তারা। তাদের হাতে স্যালাইন লাগানো। মাথা, মুখ, চোখ, নাকসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম ও রক্তের দাগ। তীব্র যন্ত্রণায় ছটফট করছে তারা। তাদের দুজনেই চোখ বন্ধ।
পরকীয়ার জেরে তাদের মা মেঘলা খাতুনকে (২২) ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করেছে তাদের বাবা মামুন আলী। এসময় দুই কন্যা শিশু জান্নাত ও কুলসুমকে আছাড় মেরে এবং মারপিট করে হত্যার চেষ্টা করে বাবা মামুন। তাদেরকে গুরুতর আহত করে নিজে নিজের মাথা ও গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন মামুন।
মঙ্গলবার (১৩ মে) রাত সাড়ে ৮টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের হরিশংকরপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১১টার দিকে মেঘলা খাতুনের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় বাবা ও দুই শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। শিশুরা এখনও জানে না যে তাদের মা আর বেঁচে নেই।
নিহত মেঘলা খাতুন কুষ্টিয়া শহরের হরিশংকরপুর এলাকার মামুন আলীর স্ত্রী। আহতরা হলেন কুষ্টিয়া শহরের হরিশংকরপুর এলাকার রবিউল ইসলামের ছেলে মামুন, চার বছর বয়সী কন্যা শিশু কুলসুম ও দেড় বছর বয়সী কন্যা শিশু জান্নাত। রবিউল একজন দিনমজুর। এছাড়াও তিনি রংমিস্ত্রির কাজ করেন। আগে তিনি ভাড়ায় রিকশা চালাতেন।
এ বিষয়ে মামুনের মা সুফিয়া বেগম বলেন, পরকীয়ার কারণে মেঘলার সঙ্গে মামুনের পারিবারিক কলহ ছিল। এর আগে সংসার ছেড়ে মেঘলা আরেক জায়গায় চলে গিয়েছিল। দুই দিন আগে মেঘলাকে ফিরিয়ে এনেছে। আজকেও নাকি বউ মোবাইলে কার সঙ্গে কথা বলছিল। ছেলে তা হাতেনাতে ধরে ফেলে। এরপর বউ ও দুই মেয়েকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও মারপিট করে গুরুতর আহত করে এবং মামুন নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। মেঘলার মৃত্যু হয়েছে, বাকিরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। দুই শিশু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে, ছটফট করছে। শিশুরা এখনও জানে না যে তাদের মা আর বেঁচে নেই।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) হোসেন ইমাম জানান, তিনজনকেই ধারালো কিছু দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়েছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১১টার দিকে মায়ের মৃত্যু হয়েছে। শিশু দুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন বলেন, পারিবারিক কলহের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত থানায় কোন মামলা হয়নি।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল