রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্যের (২৫) গ্রামের বাড়িতে স্বজনদের মধ্যে শোকের মাতম চলছে।
মেধাবী ছাত্র সাম্যকে নিমর্মভাবে হত্যা করায় সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার ধুকুরিয়া বেড়া ইউনিয়নের সড়াতৈল গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলছেন স্বজনরা। তারা হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন। সাম্য হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে জেলা ছাত্রদল বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।
নিহত শাহরিয়ার আলম সাম্য ওই গ্রামের ফরহাদ সরদারের ছেলে। তার মা কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট। পরিবারের সবাই ঢাকায় বসবাস করেন।
সাম্যের বড় চাচা ডা. কাউসার আলম বলেন, চার সন্তান নিয়ে তার ভাই ঢাকাতেই বসবাস করেন। সাম্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিল। বাকি তিন ভাতিজা বিভিন্ন কর্মে নিয়োজিত। সাম্য উল্লাপাড়া মোমোনা আলী বিজ্ঞান স্কুলের অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায়। ওখানে ভর্তি হয়ে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল।
তিনি আরও জানান, মেধাবী ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। আর সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের যদি নিরাপত্তা না থাকে, তাহলে অভিভাবকরা কীভাবে সন্তানদের পড়াবে। তিনি দ্রুত সাম্য হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি করেন।
সাম্যের চাচাতো ভাই আশরাফুল আলম জানান, সাম্য আমার চেয়ে সামান্য বড় হলেও তার সাথে অনেক স্মৃতি জড়িত রয়েছে। তিনি খুব মেধাবী ছিলেন। ঢাকা থাকলেও পরিবারের সবাই ঈদ ও বিশেষ কোনো আয়োজনে গ্রামে আসতো। সাম্যের ইচ্ছা ছিল আমেরিকায় গিয়ে পিএইচডি করে কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বের মাঝে তুলে ধরবে। কিন্তু তার সে আশা পূরণ হলো। হঠাৎ করেই গত রাত ১টার দিকে জানতে পারি সাম্যকে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খুন করা হয়েছে। এ খবর শুনে আমরা সবাই বাকরুদ্ধ ও শোকাহত। আমরা হত্যাকারীর শাস্তি দাবি করছি।
সকালে সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের উদ্যোগে সাম্য হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। সমাবেশে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি জোনায়েদ আহমেদ সবুজের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক সেরাজুল ইসলাম সেরাজ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল কায়েসসহ ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ। এ সময় তারা দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানান।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মুক্তমঞ্চের পাশ দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন সাম্য। এসময় আরেকটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তি হয়। এরই একপর্যায়ে সাম্যকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ডান পায়ে আঘাত করে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। পরে রাত ১২টার দিকে রক্তাক্ত অবস্থায় সাম্যকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ
