গ্রেফতার আতঙ্কে দিনাজপুর জেলার খানসামা উপজেলা সদরসহ ৫টি গ্রাম প্রায় পুরুষ শূন্য। পুলিশের গ্রেফতার ভয়ে এখন পুরুষেরা রাতের বেলায় বাড়ীতে থাকতে পারছেন না। দিনের বেলায় হাতেগোনা কয়েকজন পুরুষকে দেখা গেলেও রাতে সে সংখ্যা নেমে আসে শূন্যের কোটায়। এসব গ্রামগুলো হল, বানগাও, বিষ্ণনোপুর, জাহাঙ্গীরপুর, গোবিন্দপুর ও বেলপুখুর। তবে কোন কোন গ্রামে বয়স্ক ও বৃদ্ধদের দেখা গেলেও তা সামান্য।
খানসামা ডিগ্রী কলেজকে জাতীয়করনের দাবীতে ডাকা হরতাল চলাকালে জনতা-পুলিশ সংর্ঘষের ঘটনায় ৭২৮জনকে আসামি করে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। রবিবারের হরতালের পর পুলিশের মামলার ভয়ে খানসামা সদরসহ ৫ গ্রামের পুরুষ সদস্যরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে, খানসামা ডিগ্রী কলেজ জাতীয়করণের দাবিতে গত রবিবার হরতাল চলাচালে আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশের হামলা, খানসামা বাজার সংলগ্ন ৫০-৬০টি বাড়ীতে হামলা, ভাংচুর, শিশু ও মহিলা নির্যাতনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি দিনাজপুর জেলা কমিটির সভাপতি এ্যাডঃ মেহেরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান বাদল এক যুক্ত বিবৃতিতে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে তারা অবিলম্বে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি এবং মামলা প্রত্যাহার করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।
বানগাও গ্রামের রুবেল ইসলাম বলেন, আমি সারাদিন ভ্যান চালাই কিন্তু গত রবিবার থেকে কোনো আগের মত লোক এখন আর ভ্যানে উঠে না আর গ্রামে রাতে থাকতে পারছেনা।
খানসামা সদরের মুদিখানা দোকানদার আব্দুল করিম বলেন, গত রবিবার থেকে দোকানে কোনো কাস্টমার পাচ্ছিনা রাতের বেলা ঘুমাতে গেলে ভয় লাগে কখন এসে ধরে নিয়ে যায়।
সদরের বানিয়া পাড়ার ঝোড়না পোদ্দার বলেন, রবিবার দুপুরবেলা ভাত রান্না করতেছি ছেলেরা ঘরে আছে। পুলিশ বাহিরের দরজা ভেঙ্গে ঢুকে বড় ছেলেকে মারধর করতে থাকে। আমি আর আমার স্বামী আটকাতে গেলে আমাদেরকেও মারধর করে পুলিশ।
আলোকঝাড়ী ইউনিয়নের খানসামা সদরের ওয়ার্ডের মেম্বার আনিছুর রহমান (হেলাল) বলেন, এলাকার পুরুষরা গ্রেফতার আতঙ্কে কেউ বাড়ীতে থাকেনা। এখন গ্রেফতার, শিশু ও নারীদের উপর নির্যাতন করেছে পুলিশ। মিছিল-মিটিংয়ে ছিলাম না। অথচ একজন জনপ্রতিনিধি হয়েও আমার নামে মামলা হয়েছে। গ্রেফতার ভয়ে দিনমজুররাও কাজে যেতে ভয় পাচ্ছেন।
আলোকঝাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আ স ম আতাউর রহমান বলেন, এখানকার মানুষরা গ্রেফতার আতঙ্কে আছে। বেশিভাগ যুবকেরা গ্রেফতার ভয়ে বাড়ীতে নেই। আতঙ্কে অনেক দোকানপাটও বন্ধ আছে।
উল্লেখ্য, খানসামা ডিগ্রী কলেজকে জাতীয়করনের দাবীতে ডাকা রোবাবার অর্ধ দিবস হরতাল চলাকালে সংঘর্ষে পুলিশসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১৩ রাউন্ড টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে।
এ ঘটনায় রোবাবার গভীর রাতে পুলিশ খানসামা থানায় দুটি মামলা দায়ের করে। এর মধ্যে একটি মামলা দাযের করেন খানসামা থানার এস আই দুলাল উদ্দিন। এ মামলায় ৪১ জনের নাম দিয়ে অজ্ঞাত ৫০ জনকে আসামী করা হয়েছে। এই মামলায় ৫ জনকে গ্রেফতার করে কোটে চালান দেয়া হয়েছে।
অপর মামলাটি দায়ের করেন এস আই তৌহিদুল ইসলাম (মামলা নং ৩)। বেআইনী জনতা দলবদ্ধ হয়ে মারপিট দাঙ্গা, হামলা জালাও পোড়াও আইনে দায়ের করা মামলায় ৩৭ জনের নাম দিয়ে অজ্ঞাত আরো ৬ শ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/১০ জানুয়ারি ২০১৭/হিমেল