হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের মূল ভিত্তি হলো ইসলামের শাশ্বত বিধান, আল্লাহর কোরআনের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। শুধু সাংঘর্ষিক নয়, বরং কোরআন কটাক্ষকারী প্রস্তাব।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে আবহমানকাল থেকে যে সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, পরিবারভিত্তিক সমাজব্যবস্থা, সেই ব্যবস্থা ভেঙে পাশ্চাত্যের একটি সমাজব্যবস্থা, পরিবারবিহীন সংস্কৃতি গড়ে তোলা এর উদ্দেশ্য।’
গত বুধবার দেশের বেসরকারি একটি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
মামুনুল হক বলেন, ‘নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন আমরা আগাগোড়া পর্যবেক্ষণ করেছি। এটার পুরোটাই প্রত্যাখ্যানযোগ্য মনে হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এটা চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ একটা প্রস্তাব বলে আমরা চিহ্নিত করেছি। এ জন্য সব ইসলামী সংগঠনের পক্ষ থেকে অভিন্ন ভাষায় এটার প্রতিবাদও জানানো হয়েছে। শুধু প্রস্তাব নয়, এ রকম প্রস্তাব উপস্থাপন করার দায়ে আমরা কমিশনকেও বাতিল করার জোর দাবি জানাচ্ছি।’
মামুনুল হক বলেন, এই প্রস্তাবের আরেকটি লক্ষ্য মনে হয়েছে, এলজিবিটিকিউ বা সমকামিতার বৈধতা দেওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করা। বাংলাদেশের নারীসমাজকে সম্পূর্ণ বেহায়াপনার দিতে ধাবিত করা, যৌনকর্মকে উৎসাহিত করা, পতিতাবৃত্তিকে বৈধতা দেওয়া, উৎসাহিত করা এবং পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার একটা ঘৃণ্য মানসিকতা এই প্রতিবেদনে প্রস্ফুটিত হয়েছে। এ ছাড়া বিবাহ, ভরণ-পোষণ, সন্তানের লালন-পালন, বিবাহের ক্ষেত্রে তারা সব ধর্মের লোকের ক্ষেত্রে একটি আইনের প্রস্তাব করেছে।
তিনি বলেন, বিবাহবন্ধন শুধু রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক বিষয় নয়, এটা স্পষ্ট ধর্মীয় বিষয়। ধর্মীয়ভাবে বিবাহবন্ধনের এবং তা ছিন্ন হওয়ারও পদ্ধতি রয়েছে। এটা তো কোনো মানুষের নির্ধারণ করে দেওয়ার বিষয় নয়, কোনো রাষ্ট্রেরও নির্ধারণ করে দেওয়ার বিষয় নয়। রাষ্ট্র যেটা করতে পারে, যে যে ধর্মের অধীনে আছে, সেই ধর্মের বিধান কিভাবে পালিত হচ্ছে সেটাকে রাষ্ট্র পর্যবেক্ষণ ও তদারকি করতে পারে। বিশেষ করে ইসলামের বিষয়ে।
ইসলামের বিধানগুলো একেবারেই কংক্রিট। বিশেষ করে উত্তরাধিকার সম্পত্তির ক্ষেত্রে পবিত্র কোরআনের আয়াতে স্পষ্ট করে বলা আছে কিভাবে বণ্টন হবে। কাজেই এভাবে বর্ণিত আল্লাহর বিধানকে পরিবর্তন করার প্রস্তাব ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারে না।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের এই আমির বলেন, ‘এভাবে আমাদের সমাজব্যবস্থায় বিপর্যয় সৃষ্টির ভয়াবহ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই প্রস্তাব যদি কার্যকর হয় বা সরকার যদি এই প্রস্তাব বাস্তবায়নের ভয়ংকর পথে পা বাড়ায় তাহলে আল্লাহ না করুক, দেশের মধ্যে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি যয়ে যাবে। কারণ এ দেশের মুসলমানরা এতটা নির্জীব হয়ে যায়নি যে আল্লাহর বিধানকে কটাক্ষ করার পরেও তারা বিষয়টাকে সহজভাবে মেনে নেবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই প্রস্তাবে সরাসরি বলা হয়েছে, নারী-পুরুষের বৈষম্যের প্রধান কারণ হলো ধর্মীয় বিধান। যেখানে সরাসরি আল্লাহর কোরআনে বলা হয়েছে, কোরআন নাজিল হয়েছে সমাজের বৈষ্যম্য দূর করে ইনসাফ ও সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য। এখানে কোরআনের দর্শন বোঝার বিষয় আছে। আমরা মনে করি, যাদের প্রস্তাবের জন্য কমিশনে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, এই জায়গাটাতে ভুল হয়েছে। এখানে একপেশে কিছু লোকজন, যারা বাংলাদেশের বেশির ভাগ নারীসমাজের প্রতিনিধিত্ব করে না। যাদের এই কমিশনের সদস্য করা হয়েছে, তারা সবাই পশ্চিমা জীবনধারায় প্রভাবিত; এনজিওগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত, বিদেশি বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত।’
মাওলানা মামুনুল হকের মতে, বাংলাদেশের নারীসমাজের মূলধারা, চিন্তা-চেতনা থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু মানুষকে দিয়ে এই কমিশন গঠন করায় এই বিকৃত প্রস্তাব তাঁরা উপস্থাপন করেছেন। কাজেই এটার বিষয়ে আজ শনিবারের মহাসমাবেশে বড় ঘোষণা আসবে।