লন্ডনে চিকিৎসা শেষে আগামী সোমবার দেশে ফিরবেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তাঁর সঙ্গে আসছেন দুই পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান এবং সৈয়দা শর্মিলা রহমান। দীর্ঘ তিন মাস ২৫ দিন পর ৪ মে লন্ডন থেকে বেগম জিয়াকে বহনকারী উড়োজাহাজ রওনা দেবে এবং ৫ মে সোমবার বেলা ১১টায় ঢাকায় পৌঁছার কথা রয়েছে। এ বিষয়ে বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রফেসর ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, ৪-৫ মে ম্যাডাম দেশে ফিরতে পারেন। তাঁর সঙ্গে দেশে ফিরবেন দুই পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান ও সৈয়দা শর্মিলা রহমান।
কাতার এয়ারওয়েজের বিশেষায়িত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ফিরবেন কি না-বিষয়টি নিশ্চিত করেননি ডা. জাহিদ হোসেন। তিনি বলেছেন, কাতার এয়ারওয়েজের বিশেষায়িত এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বা বাংলাদেশ বিমানের মধ্যে যেটি আগে পাওয়া যাবে সেটিতেই ফ্লাই করা হবে। একই তথ্য জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘ইনশাল্লাহ ম্যাডাম ৫ তারিখ সকালে দেশে ফিরছেন। আমরা যতদূর জানি সঙ্গে উনার দুই বউমা আসার কথা রয়েছে।’ কেমন আছেন খালেদা জিয়া-জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ আগের চাইতে উনি (খালেদা জিয়া) ডেফিনেটলি ভালো।’ কীভাবে দেশে ফিরছেন সে বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ম্যাডামের দেশে ফেরার ব্যাপারে কাতারের আমিরের কাছ থেকে যে অ্যাম্বুলেন্সটা তাঁকে লন্ডনে নেওয়ার জন্য পেয়েছিলাম, সেটা এখন একটু বিলম্বিত হচ্ছে টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে। সেজন্য ম্যাডাম ঠিক করেছেন ওই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটা যদি শেষ মুহূর্তে না পাওয়া যায় তিনি বাংলাদেশ বিমানেই আসবেন। বাংলাদেশ বিমানে ইতোমধ্যে সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৪ মে তিনি রওনা হলে ইনশাল্লাহ ৫ তারিখ বেলা ১১টায় দেশে এসে পৌঁছাবেন বলে আশা করছি।’ উল্লেখ্য, উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৮ জানুয়ারি লন্ডনে যান বিএনপি চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। লন্ডনের দ্য লন্ডন ক্লিনিক নামে একটি চিকিৎসালয়ে প্রফেসর প্যাট্রিক কেনেডি ও জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধানে ১৮ দিন চিকিৎসা নেন তিনি। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে খালেদা জিয়াকে তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র তারেক রহমানের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখানেও প্রফেসর প্যাট্রিক কেনেডি ও জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলে। চিকিৎসকদের অনুমতিক্রমেই দেশে ফিরছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। পুরোপুরি সুস্থ না হলেও উন্নত চিকিৎসা গ্রহণ ও পরিবারের সদস্যদের সান্নিধ্যে থেকে আগের চেয়ে অনেকটাই সুস্থ আছেন। অর্ধযুগের বেশি সময় পর এবারই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করেছেন বেগম খালেদা জিয়া। এদিকে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসা ‘ফিরোজা’ প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান। তিনি জানান, ম্যাডামের বাসভবন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন ম্যাডাম খালেদা জিয়া দেশে ফিরছেন। এ-সংক্রান্ত সব প্রস্তুতির কাজ আমরা করছি। ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে সবকিছু জানানো হয়েছে। লন্ডন থেকে দেশে ফেরার বিষয়টি জানিয়ে গত সপ্তাহে বিএনপি মহাসচিব অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনকে চিঠি দেন। মহাসচিবের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার লন্ডন ও দোহার বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দেশে ফেরাতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন ২০১৮ সালে তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকারের আমলে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। করোনা মহামারির সময় সরকার তাঁকে বিশেষ বিবেচনায় শর্ত সাপেক্ষে বাসায় থাকার অনুমতি দেয়। এদিকে, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি কারাবন্দি ছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত।