সদ্যই দোহায় এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপে কিংসের জার্সিতে দারুণ অভিষেকের পর নিজের নতুন দেশ বাংলাদেশে এসেছেন ১৯ বছর বয়সী তরুণ কিউবা মিচেল। বসুন্ধরা কিংস সভাপতি ইমরুল হাসানের অফিস কক্ষে ক্লাব প্রধানের সঙ্গে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসংক্রান্ত আলোচনার ফাঁকে কিউবা দিয়েছেন সাক্ষাৎকার।
প্রশ্ন : বসুন্ধরা কিংসে নাম লেখানোর পেছনের কারণ কী?
কিউবা মিচেল : সান্ডারল্যান্ডের সঙ্গে চুক্তি শেষ হওয়ার পর ফ্রি খেলোয়াড় হয়ে যাই। এরপর ইংল্যান্ডেই নতুন ক্লাব খুঁজছিলাম। তখন বসুন্ধরা কিংস আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। এটা এমন একটি প্রজেক্ট যেখানে নিজেকে জড়াতে চেয়েছিলাম এবং আমি জানি এখানে এসে আমার পারফরম্যান্সের গ্রাফটা আরো উঁচুতে তুলতে পারব। এ কারণেই বসুন্ধরা কিংসকে বেছে নিয়েছি এবং এটাই আমি চেয়েছিলাম।
প্রশ্ন : ইংল্যান্ডের একাডেমি পর্যায় থেকে আপনার বাংলাদেশে চলে আসাটা চমকে ওঠার মতো ব্যাপার। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া কতটা কঠিন ছিল?
কিউবা : এটা ঠিক যে ইংল্যান্ডের একাডেমি থেকে একজন বংশোদ্ভূত ফুটবলারের বাংলাদেশের লিগে আসা বিরল ঘটনা। তবে সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন ছিল না। কারণ আমার সামনে উদাহরণ ছিল। এই যেমন- হামজা চৌধুরী বাংলাদেশের হয়ে খেলার পর শমিত শোম এবং আমি নিজে বাংলাদেশের হয়ে খেলতে আগ্রহী হলাম। এটি বাংলাদেশ ফুটবলের জন্য আরেকটি ভালো দিক হতে পারে এবং আশা করি অনেক প্রবাসী খেলোয়াড় এখানকার লিগে খেলার জন্য আসতে শুরু করবে এবং লিগের মান আরো উন্নত হবে।
প্রশ্ন : বসুন্ধরা ছাড়া আর কোন কোন ক্লাব থেকে কি প্রস্তাব পেয়েছিলেন?
কিউবা : ইংল্যান্ডেরই একটি অনূর্ধ্ব-২১ দল থেকে প্রস্তাব ছিল। কিন্তু সত্যি আমি আর যুব দলে খেলতে চাইনি। আমি সিনিয়র দলে নতুন যাত্রা শুরু করতে চেয়েছিলাম। নতুন অভিজ্ঞতা পেতে চাচ্ছিলাম। তাই আমি মনে করি বসুন্ধরার হয়ে খেলতে পারা আমার জন্য সেরা সিদ্ধান্ত। আমি এখানে এগিয়ে যেতে চাই।
প্রশ্ন : প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসেছেন। মানিয়ে নিতে কী কী সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন?
কিউবা : সত্যি বলতে আমি প্রস্তুত। আমি মনে করি না অন্যদের চেয়ে আমি ভালো। সেটা প্রবাসী হোক কিংবা স্থানীয় খেলোয়াড়। অনেক উঁচু জায়গা থেকে এসেছি, এমনটা ভাবারও সুযোগ নেই। এটাই সব নয়। আমার মনে হয় না এখানে সুযোগ-সুবিধাগুলো নিয়ে কোনো সমস্যা হবে। এই ক্লাবে স্থানীয় খেলোয়াড়রা অনেক বছর ধরে খেলছে এবং ভালো করছে। শুধু খেলোয়াড়দের সঙ্গেই আমাকে মানিয়ে নিতে হবে। আশা করছি খুব দ্রুতই আমি মানিয়ে নিতে পারব।
প্রশ্ন : শুরু থেকেই দেশের ফুটবলে বসুন্ধরা কিংস আধিপত্য দেখিয়ে খেলছে। এখন তারা এএফসির টুর্নামেন্টেও ভালো করতে চায়। সেখানে আপনি কিভাবে অবদান রাখতে চান?
কিউবা : আশা করছি এখানে বড় ভূমিকা রাখতে পারব আমি। সত্যি বলতে এই ক্লাবে যোগ দেওয়ার পেছনে এএফসির টুর্নামেন্টে খেলতে পারার বিষয়টিও বড় কারণ ছিল। এখানে অনেক খেলোয়াড় খেলার সুযোগ পায় না। তাই মনে করছি, এই দলের হয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারব এবং এখন চ্যালেঞ্জ লিগের গ্রুপ পর্ব পেরোতে চাই। আমি খুবই রোমাঞ্চিত এবং আশা করছি আমরা সবাই মিলে বাংলাদেশের জন্য বড় কিছু অর্জন করতে পারব।
প্রশ্ন : সমর্থকরা আপনাকে নিয়ে বেশ আগ্রহী। প্রত্যাশাও বেশি। আপনি কি আঁচ করতে পারছেন?
কিউবা : অবশ্যই, ভক্তরা তো প্রত্যাশা করবেই। বসুন্ধরা কিংসে যোগ দেওয়ার আগে সমর্থকরা আমার খেলা ইউটিউবে দেখেছে। সৃজনশীলতা, টেকনিক, গোল, অ্যাসিস্ট; আমার কাছ থেকে তারা আশা করে নিশ্চয়ই। এই প্রত্যাশাকে আমি সমর্থন মনে করছি। তেমনি আমি সত্যিই খুব রোমাঞ্চিত ভক্তদের কিছুটা হলেও ফিরিয়ে দিতে পারার সুযোগ পেয়ে। সত্যি, আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না।
প্রশ্ন : বসুন্ধরা কিংসের সুযোগ-সুবিধা দেখে প্রথমে আপনার কী মনে হয়েছে?
কিউবা : সত্যি আমি অবাক হয়েছি। এই ক্লাবের অনুশীলনের মান অনেক ভালো এবং উঁচু মানের খেলোয়াড় রয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে, কিছু সমর্থক এটা বুঝতে পারছে না এবং ভাবছে অন্য লিগের ক্লাব এর চেয়েও ভালো। কিন্তু আমি মনে করি বসুন্ধরা কিংসের খুব ভালো স্কোয়াড আছে এবং এ বছর আমরা ভালো কিছু করতে পারব।
প্রশ্ন : দলের হয়ে একটি ম্যাচ খেলেছেন। এখন পর্যন্ত কোন সতীর্থের সঙ্গে ভালো সখ্য গড়ে উঠেছে?
কিউবা : অনেক খেলোয়াড়ই আমাকে সাহায্য করেছে। তপু বর্মণ, সোহেল রানা... অবশ্যই তারিক কাজী। সে ফিনল্যান্ড থেকে এসেছে।
প্রশ্ন : এখন আপনার বাহরাইনে অনূর্ধ্ব-২৩ দলের সঙ্গে থাকার কথা ছিল। কিন্তু যেতে পারেননি। এটা নিয়ে কী বলবেন?
কিউবা : হ্যাঁ, সেখানে থাকার কথা ছিল। কিন্তু ক্লাব চেয়েছে দলের সঙ্গে আমি প্রাক-মৌসুম প্রস্তুতিতে থাকি। যেটা আমার জন্য ভালোই হবে। তবে অনূর্ধ্ব-২৩ দলে যোগ দেব সেটা আমি জানি না, আমাকে কিছু বলেনি। এটা নিশ্চিত যে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
প্রশ্ন : বসুন্ধরা কিংসকে কোথায় দেখতে চান?
কিউবা : আমি চাই এই ক্লাব সব সময় আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বড় টুর্নামেন্টগুলো খেলুক। আমি মনে করি, সেখানে আমরা নিয়মিত ভালো করব।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে কী স্বপ্ন দেখেন?
কিউবা : আশা করব বাংলাদেশের ফুটবল আরো এগিয়ে যাবে। ব্যক্তিগতভাবে আমার লক্ষ্য, এ দেশের ফুটবলে বড় কোনো অবদান রাখা। সেটা করার পথে কিংসে আসা ছিল সেরা সিদ্ধান্ত। জাতীয় দলের কথা বলতে গেলে, আমি মনে করি, সবাই বিশ্বকাপে চোখ রেখে এগোতে চায়। হয়তো আমাদের ক্ষেত্রে এখন সেটা সম্ভব না, কিন্তু আমাদের যে স্কোয়াড আছে সেটা আরো শক্তিশালী করে ভবিষ্যতে বিশ্বকাপে খেলতে পারি। এটা করতে পারলে সমর্থকদের সবচেয়ে সেরা মুহূর্ত উপহার দিতে পারব।
প্রশ্ন : আপনি কি মনে করেন, বাংলাদেশে পেশাদার ফুটবলে খেলে নিজেকে আরো উন্নত করতে পারবেন?
কিউবা : হ্যাঁ, অবশ্যই। যদিও কিংসে যোগ দেওয়ার আগে এটা নিয়ে ভাবিনি। এমনকি জাতীয় দলে কতটা প্রভাব রাখতে পারব—সেটাও ভাবিনি। এখন আমি এখানে চলে এসেছি। দেখলাম, কিংসের অনেক খেলোয়াড় জাতীয় দলেও খেলে থাকে। এটা আমাকে ভালো করতে আরো সাহায্য করবে, কারণ আমি ওদের জানি। ওদের সঙ্গে খেলেছি বলে আমি মানিয়েও নিতে পারছি। আশা করছি এটা ইতিবাচক প্রভাব রাখবে।
প্রশ্ন : কিছুদিন হলো বাংলাদেশে আছেন। নতুন কী খুঁজে পেলেন?
কিউবা : ইংল্যান্ড এবং এখানকার মধ্যে অনেক পার্থক্য। কিন্তু আমি বেশ উপভোগ করছি। এখানকার সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছি। খুব ভালো লাগছে। এ দেশের আরো অনেক কিছু জানতে চাই। যদিও এটাই আমার প্রথমবার বাংলাদেশে আসা। আমি জানি আমার মায়ের আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি আছে সিলেটে। সেখানে অবশ্যই যেতে চাই।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ