রাঙামাটিতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের নিজস্ব মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়েছে। তাই নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই চার জাতিগোষ্ঠী অর্থাৎ চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও সাদ্রি ভাষার ওপর প্রণীত স্ব স্ব মাতৃভাষার পাঠ্যবই শিশুদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।
বইগুলো তাদের নিজস্ব লিপিতে লেখা। নিজস্ব সংস্কৃতির চিত্রসহ আনুষঙ্গিক বিষয় দিয়ে বইগুলো সাজানো হয়েছে। সারা দেশের সঙ্গে রাঙামাটিতেও বছরের প্রথম দিন পাঠ্যবই হাতে পেয়ে খুশিতে নাচছে পাহাড়ি শিশুরা।
রাঙামাটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি ছাড়া শুধুমাত্র রাঙামাটিতে এবারই প্রথম মাতৃভাষায় নতুন বই পেয়েছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুরা। পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের দীর্ঘদিনের দাবির পর এনসিটিবি প্রাক-প্রাথমিকের জন্য জাতীয়ভাবে প্রণীত বইয়ের আদলেই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষায় এসব বইয়ের তৈরি করা হয়েছে। তবে বর্ণভিত্তিক পরিচয়গুলো দেওয়া হয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতির। নিজেদের ভাষায় নতুন বই পেয়ে খুশি ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা।
এব্যাপারে রাঙামাটি জেলা প্রাথমিক সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মনছুর আলী চৌধুরী জানান, একটা সময় পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের শিশুরা সহজে বাংলা ভাষায় কথা বলতে না পারার কারণে প্রাথমিক অবস্থায় শিক্ষা থেকে ঝড়ে পরতো। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের জন্য তাদের স্ব স্ব ভাষায় পাঠ্যবই দিয়ে পাহাড়ের ছেলে-মেয়েদের একদিকে যেমন বিদ্যালয় মুখি করেছে। অন্যদিকে পাহাড়ে বসবাসরত বিভিন্ন ভাষাভাষির মানুষগুলোর ভাষাও সংক্ষণ করেছে।
এদিকে পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত ১০ ভাষাভাষি ১১টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মধ্যে শুধুমাত্র চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও সাদ্রি ভাষার ওপর প্রণীত স্ব স্ব মাতৃভাষার পাঠ্যবই প্রস্তুত করা হলেও এসব ভাষায় পড়ানোরমত শিক্ষক সংকটের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা বলেন, রাঙামাটির ৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাতৃভাষায় ছাপানো বই শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে পাহাড়ে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের দীর্ঘ দিনের দাবিও পূরণ করলো সরকার। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে স্ব স্ব মাতৃভাষায় শিক্ষা দেওয়ার জন্য শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। জাতীয় শিক্ষানীতিতেও শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষা দেওয়ার হবে।
অন্যদিকে পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের শিক্ষার্থীদের নিজস্ব ভাষার পাঠ্যবই প্রণীত হওয়ায় সরকারের উপর আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে পাহাড়ের মানুষের।
বিডি প্রতিদিন/১০ জানুয়ারি ২০১৭/হিমেল