শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। আর প্রাথমিক শিক্ষা এর মূল ভিত্তি। আর যেখানে প্রাথমিক শিক্ষা দান করা হয় সেই ভবনটি যদি ভঙ্গুর হয় তাহলে পাঠদান ব্যাহত হওয়াই স্বাভাবিক। বিদ্যালয়গুলোর প্লাস্টার খসে পড়ছে। ছাদে বড় ফাটল। ছাত্র-ছাত্রীরা গাছ তলায় প্রচন্ড গরমে ক্লাস করছে, পরীক্ষাও দিচ্ছে। এদিকে মেঘ ডাকলেই ছুটির ঘণ্টা বেজে ওঠছে। সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার বনবাড়ীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চৌহালী উপজেলার মুরাদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দৃশ্য এমনই। শুধু একটি বিদ্যালয় নয় জেলায় এরকম প্রায় ৫৫টি বিদ্যালয় রয়েছে যার অবস্থা এমন করুণ।
সরেজমিনে জানা যায়, ১৯০৫ সালে বনবাড়ীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯৭৭ সালে ৫ কক্ষ বিশিস্ট বিল্ডিং নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ২০০৫ সালের দিকে বিদ্যালয়ের ছাদের পলেস্টার ও দেয়ালের পলেস্টার খসে পড়ছে। দেয়ালে ও ছাদে ফাটল দেখা দেয় ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই ছাত্র-ছাত্রীরা গাছতলায় লেখা করছে। বর্তমানে স্কুলটিতে ৩০৫ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। ফলাফলের দিকেও উপজেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠ। এবার পিএসসিতে ২৬ জনের মধ্যে সকলে এ প্লাস পেয়েছে। খেলাধুলাতে এ স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা উপজেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠ।
অন্যদিকে চৌহালীর মুরাদপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৮৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। যমুনার করাল গ্রাসে কয়েক বছর আগে সেটি বিলীন হয়ে যায়। এরপর বিদ্যালটি নির্মাণে বরাদ্দ দেয়া হলেও কাজে গড়িমসি করায় গাছতলায় আবার কখনে শুধু টিনের ছাউনী বা পলিথিনের নীচে পাঠদান চলছে। একই অবস্থা পাগলা বোয়ালিয়া, হাটিকুমরুল ইউপির রশিদপুর, ধুবিল কালিবাড়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।
বনবাড়ীয়া স্কুলের ৫ম শ্রেণির ছাত্র আসাদুজ্জামান নীবর, মুনসুর হোসেন মুন্না ও সিমু জানান, আমাদের ক্লাস করতে খুব কষ্ট হয়। প্রতিদিন ক্লাস রুম থেকে চেয়ার-বেঞ্চ বের করে গাছতলায় বয়ে এনে ক্লাস করতে হয়। একটু বৃষ্টি হলে দৌড়ে মানুষের বাড়িতে অথবা বেঞ্চ উল্টিয়ে তার নীচে থাকতে হয়। বই খাতা ভিজে যায়। অনেক সময় পাখিও তাদের মাথার উপর বিষ্ঠা ত্যাগ করে।
স্কুল ছাত্র হীরা জানান, বৃষ্টির পর নিজেদের খাতা ছিড়ে বেঞ্চ মুছে বসতে হয়। আবার রোদের সময় গরমে প্রচন্ড কষ্ট হয়। স্কুল ছাত্রী খাতুনে জান্নাত তোফা জানান, বৃষ্টির মধ্যে ভাঙ্গা বিল্ডিংয়ে গেলে পলেস্তরা খসে পড়ে অনেকে আহত হয়েছে।
মুরাদপুর স্কুলের শিক্ষার্থীরা জানান, বৃষ্টি হলে বই খাতা ভিজে যায়। ভিজতে ভিজতেই বাড়ি চলে যেতে হয়। আর বর্ষা হলেই স্কুলের জমিতে পানি উঠে তলিয়ে যায়। আমাদের পাঠদান চলে রাস্তার ওপর গাছ তলায় আবার কখনো খোলা আকাশের নীচে।
অভিভাবক আবু তাহের জানান, ছেলে-মেয়ে ও ভাতিজাদের স্কুলে পাঠিয়ে আমরাও আতঙ্কে থাকি। কখন জানি কি হয়। যে কোন সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটে হতাহতের ঘটনাও ঘটতে পারে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মাহমুদা খাতুন জানান, ছেলে-মেয়েরাও আতঙ্কে থাকে আমরাও আতঙ্কে থাকি। আর আতঙ্কের কারণে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী কমে যাচ্ছে। বার বার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে বলা হলেও কোন কাজ হচ্ছে না।
মুরাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.আবুল কালাম আজাদ জানান, ভবন ও শ্রেণি কক্ষ না থাকায় নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। শত কষ্টে ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে পাঠদান চালিয়ে যেতে হচ্ছে। দ্রুত নতুন ভবনের কাজ সম্পন্ন না হলে মহা বিপদে পড়তে হবে।
সিরাজগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক মোহাম্মদ ইউসুফ রেজা ভবন না থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হবার কথা স্বীকার করে জানান, বনবাড়ীয়া বিদ্যালয়ের জায়গা জটিলতার কারণে ভবন নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না। আর অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্ধ পেলে ভবন নির্মাণ করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/৩ জুন ২০১৭/হিমেল