বাগেরহাটের শরণখোলায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) মাধ্যমে সরবরাহকৃত উচ্চ ফলনশীল আমন বীজ নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ডিপো থেকে চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম দেওয়ার অজুহাতে কৃত্রিম সংকট তৈরী করে সরকার নির্ধারিত ৪০০ টাকা মূল্যের বীজ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি করছেন ডিলাররা।
এদিকে, সময় মতো বীজতলা তৈরী করতে না পারলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কৃষক, এই আশঙ্কায় বাধ্য হয়ে তারা চড়া দামে বীজ কিনে নিচ্ছেন। আবার অনেকে চড়া দাম দিয়েও বীজ পাচ্ছেন না। কোনো রকম দামাদামি করলে বীজ নেই বলেও ফেরত দেওয়া হচ্ছে অনেককে। ফলে বীজ নিয়ে উপজেলার সর্বত্র কৃষকদের মধ্যে একটা চাপা ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
তবে উপজেলা কৃষি বিভাগের দাবি, বীজের কোনো সংটক নেই। কৃষকদের হতাশ হবারও কিছু নেই। কৃত্রিম সংকট তৈরী হলেও আমনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হবেনা।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি আমন মৌসুমে শরণখোলা উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে ৯৬৭৫ হেক্টর জমিতে ১২ হাজার কৃষক আমন চাষাবাদের প্রস্তুতি নিয়েছেন। কৃষকদের বীজ সংকট নিরসন ও উচ্চ ফলনশীল (উফশি) দান চাষাবাদের জন্য বিআর-১১, ব্রি-৫২, ব্রি-৪৯ জাতের বীজ ধান বিএডিসি’র মাধ্যমে কৃষকদের মাঝে সরকার নির্ধারিত মূল্যে সরবারহ করা হয়।
এ জন্য গত ১ জুন থেকে উপজেলায় ৫ ব্যবসায়ীকে ডিলার হিসাবে নিয়োগ দেন বিএডিসি কর্র্তৃপক্ষ। মৌসুমের শুরু থেকেই এলাকার চাহিদা অনুযায়ী ডিপো থেকে বীজ উত্তোলন করেন ডিলাররা। কিন্তুবীজের কৃত্রিম সংকট তৈরী করে দরিদ্র কৃষকের কাছে তা দ্বিগুন দামে বিক্রি করে অধিক মুনাফার লুফে নিচ্ছেন ডিলাররা।
উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের বাজার যথাযথ মনিটরিং না থাকায় ডিলাররা ইচ্ছেমতো ১০ কেজি ওজনের এক বস্তা বীজ নির্ধারিত মূল্য ৪০০ টাকার পরিবর্তে ৬০০ থেকে ৮০০টাকায় বিক্রি করছেন।
উপজেলার কদমতলা গ্রামের চাষী সাকাওয়াত হোসেন, খাদা গ্রামের চাষী আমলগীর হোসেনসহ কৃষি সংশ্লিষ্ট অনেকই অভিযোগ করেন, ১০ কেজি ওজনের ধানের বস্তার দাম সরকারি ভাবে ৪০০টাকা নির্ধারণ করা। অথচ ডিলাররা বীজ সংকটের কথা বলে তাদের কাছ থকে সুযোগ বুঝে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা রাখছে। পরবর্তীতে যদি বীজ না পাওয়া যায় এই ভয়ে বেশি দামে বীজ কিনতে হচ্ছে তাদের।
স্থানীয় ডিলারদের দাবি, সকল জাতের বীজ মিলিয়ে উপজেলায় (১০ কেজি ওজনের) প্রায় ১ লাখ বস্তা ধান প্রয়োজন। প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তবে অতিরিক্ত দামে বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করেন তারা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌমিত্র সরকার বেশি দামে বীজ বিক্রি করার কথা শুনছেন দাবি করে বলেন, বীজের কোনো সংকট নেই। এটা স্থানীয় ডিলারদের কারসাজি। কৃত্রিম সংকট তৈরী ও বা বেশি দামে বিক্রির প্রমাণ পেলে ব্যবস্তা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে খুলনা বিভাগের বিএডিসি’র পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন জানান, সরকারি বীজের কোন সংকট নেই। তবে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে যেভাবে বরাদ্ধ দেয়া হয় সে অনুপাতে ডিলারদের মাঝে বীজ বিতরণ করেন তারা।
বিডি প্রতিদিন/ ৪ জুলাই, ২০১৭/ ই জাহান