ফরিদপুরের ঐতিহ্যবাহী সিএন্ডবি ঘাটকে ২০১৫ সালে ‘ফরিদপুর নদী বন্দর’ হিসাবে ঘোষণা করা হলেও এর কোন সুফল পাওয়া যায়নি। পদ্মা নদী সংলগ্ন ফরিদপুরের সদর উপজেলার উত্তরের সীমানা ডিক্রিরচর ইউনিয়নের টেপুরাকান্দি, দক্ষিণের সীমানা আলীয়াবাদ ইউনিয়নের সাদিপুর মৌজা পর্যন্ত নদী বন্দরের সীমানা নির্ধারণ করা হয়। নদীবন্দর ঘোষনা হলেও এখনো শুরু হয়নি উন্নয়ন কাজ। নদী বন্দরকে ঘিরে উন্নয়নমূলক কাজ হাতে না নেয়ায় মুখ থুবরে পড়তে বসেছে ঐতিহ্যবাহী এ বন্দরটি।
বর্তমানে পদ্মানদীতে ড্রেজিং না হওয়ায় নাব্যতা সংকটে পড়েছে ঘাট এলাকা। এতে ঘাটে ভিড়তে পারছেনা পণ্যবাহী কার্গো ও বড় বড় ট্রলার। ঘাট থেকে ৫/৬ কিলোমিটার দূরের পদ্মা নদীতে আটকে আছে বেশকিছু মালবাহী কার্গো। আটকে থাকা বাহনের নাবিক ও সহযোগিরা জানান, মাঝারি ধরণের পণ্যবাহী নৌযান চলাচলের জন্যে কমপক্ষে ৮ ফুট নাব্যতা থাকার প্রয়োজন হয়। কিন্তু পদ্মানদীর ওই অংশে কোথাও কোথাও নাব্যতা রয়েছে চারফুটেরও কম। এতে মালবাহী নৌযান নিয়ে ঘাটে পৌঁছানো যাচ্ছেনা।
অনেকে আবার সপ্তাহকালের অধিক সময় ধরে এখানে আটকে আছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়ছেন নৌযান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। এদিকে এ নৌপথে গমনকারী শরিফুল ইসলাম ও সিমেন্ট ব্যবসায়ী হেলালুর রহমান জানান, সময় মত মালামাল না আসায় ও আটকে থাকা নৌযান থেকে ছোট ছোট নৌযান ব্যবহার করে পণ্য খালাস করে ঘাটে আনায় ক্ষতির মুখে পড়ছেন তারা।
সাবেক কাউন্সিলর এমএ সালাম লাল মিয়া জানান, সিএন্ডবি ঘাটকে ঘিরে রয়েছে ৫-৬ হাজার শ্রমিকের জীবন-জীবিকা। যাদের একটি বড় অংশ অলস সময় কাটাচ্ছেন। শ্রমিকনেতা ও জনপ্রতিনিধি মনে করেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে নৌযানে পণ্য পরিবহন কমে যাবে। এতে বেকার হয়ে পড়বে শ্রমিকরা।
ঘাট ইজারাদার কর্তৃপক্ষ নাফিজুল ইসলাম তাপস জানান, এলজিআরডি মন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টচায় সিএন্ডবি ঘাট ফরিদপুর নদী বন্দরে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে চট্রগ্রাম, নারায়নগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন বন্দর থেকে সরাসরি পণ্য আসে ফরিদপুর নদী বন্দরে। আর ফরিদপুর থেকে প্রতিদিন গরু ও ধান, পাটসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহন করা হয় বিভিন্ন এলাকায় এবং বিভিন্ন বন্দর থেকে সিমেন্ট, বালু, কয়লা, রডসহ অন্তত ৫০ ধরণের পণ্য আনা-নেওয়া করা হয়। তিনি মনে করেন, নাব্যতা সংকট দুরীভূত না হলে মালামাল পরিবহন কমে যাবে, এতে কমে যাবে রাজস্ব আদায়। এছাড়া ঘাটের পল্টুনসহ উন্নয়ন না করা হলে ঐতিহ্য হারাবে এ ঘাট।
যদিও বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে এরই মধ্যে জরিপের কাজ শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। জরিপ শেষে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে বলে জানান বিআইডব্লিউটিএ এর উপ পরিচালক (সার্ভে) আশফাকুর রহমান।
চলতি বছরে ফরিদপুর নদী বন্দর ৩৭ লক্ষ টাকায় ইজারা দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বন্দরের সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে নদী পথে পণ্য পরিবহনে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে, এতে সরকারের রাজস্বও বেড়ে যাবে।
বিডি প্রতিদিন/১৭ নভেম্বর ২০১৭/হিমেল