রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি শক্তিমান চাকমাকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। একই ঘটনায় চেয়ারম্যানের সহকারি রূপন চাকমাও গুরুত্বর আহত হয়। আজ বেলা ১১টার দিকে নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের মাঠে এ ঘটনা ঘটে। রাঙামাটি জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর কবীর উপজেলা চেয়ারম্যানের নিহতের খবর নিশ্চিত করেছেন।
অন্যদিকে, এ ঘটনার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি একাংশ এমএন লারমা গ্রুপ অর্থাৎ সংস্কারপন্তির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরা প্রতিপক্ষ ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-কে দায়ী করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদ চত্বরের বাসভবন থেকে মোটরসাইকেলে করে পরিষদ কার্যালয়ে যাচ্ছিল চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমা। এসময় তার সাথে ছিল সহকারী চাকমা। কিন্তু এ আগে প্রায় ২০০ গজ দূরে দুই সশস্ত্র সন্ত্রাসী আগে থেকে ওঁৎ পেতে ছিল। পরে চেয়ারম্যানকে সামনে পেয়ে এলোপাথারি ব্রাশফায়ার করলে মোটরসাইকেল থেকে পড়ে যান। এ সময় একজন অস্ত্রধারী এগিয়ে গিয়ে তাকে খুব কাছ থেকে গুলি করে পালিয়ে যায়। এসময় চেয়ারম্যানের সহকারী রূপন চাকমাও সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুরুত্বর আহত হয়।
খবর পেয়ে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে নানিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক চেয়ারম্যানকে শক্তিমান চাকমাকে মৃত ঘোষণা করে। অপর জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করার কথা জানান। নিহত নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যানের মরদেহ রাঙামাটির সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য প্রেরণ করা হয়।
এদিকে এ ঘটনার পর পুরো এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সহিংসতা এড়াতে পুরো এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোড়দার করা হয়েছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়।
এব্যাপারে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি এমএন লারমা গ্রুপের (সংষ্কারপন্তি) কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরা বলেন, এটা একটা পরিকল্পিত ঘটনা। সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আগে থেকে ওঁৎ পেতেছিল। ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর সশস্ত্র গ্রুপর নেতা অর্পন চাকমার নেতৃত্বে নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যানের উপর এ সশস্ত্র হামলা হয়েছে।
তবে এঘটনার জন্য এমএন লারমা গ্রুপ ইউপিডিএফেকে দায়ী করলেও এ বিষয়ে সংগঠনটির কোন নেতা কর্মী কথা বলতে নারাজ।
রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল লতিফ জানান, এক দল দুর্বৃত্ত চেয়ারম্যানকে লক্ষ্য করে গুলি করে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হলে তার মৃত্যু হয়। তবে কে বা কারা এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে এ ব্যাপারে থানায় এখনো কোন মামলা হয়নি।
উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক দল জনসংহতি সমিতি থেকে বেরিয়ে গিয়ে বিদ্রোহীরা গ্রুপ জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) নামে নতুন দল গঠন করেছিলেন সংষ্কারপন্থী নামে এ সংগঠন। এ সংগঠনটির অন্যতম প্রভাবশালী নেতা ছিলেন শক্তিমান চাকমা।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার