পঞ্চগড়ে ৯ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসব। 'মানবতার জন্য নাটক’ এই শিরোনামে নাট্য দল ভূমিজ এই উৎসবের আয়োজন করছে। সাতদিনের এই আয়োজনে ভারত, নেপাল এবং বাংলাদেশের ৯টি নাট্যদল অংশগ্রহণ করবে।
আয়োজকরা জানিয়েছে, উৎসব ঘিরে রয়েছে আরও নানা আয়োজন। ৭ দিন ব্যাপী নেপাল ও বাংলাদেশের অংশগ্রহণে ফুড ফেস্টিভালও অনুষ্ঠিতহবে। দেশের উত্তরাঞ্চলে আন্তর্জাতিক পরিসরে এটাই প্রথম নাট্য উৎসব। তাই এই উৎসব ঘিরে পঞ্চগড়ের সাংস্কৃতিক কর্মীদের মধ্যেও উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে।
নাট্যউৎসব পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক আবু তয়াবুর রহমান বলেন, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর থেকে ভারত, নেপাল ও ভূটানের দূরুত্ব অত্যন্ত কম। এই বন্দর দিয়ে এই দেশগুলোর সাথে পণ্য আমদানি-রফতানিসহ যাতায়াত চলছে। এই দেশগুলোর সাথে সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন সৃষ্টির লক্ষ্যে ভূমিজ এই নাট্য উৎসবের আয়োজন করেছে।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এই উৎসব উদ্বোধন করবেন বলে কথা রয়েছে। পঞ্চগড় সাহিত্য পরিষদের সভাপতি আরিফুল ইসলাম পল্লব বলেন, আয়োজনটা ভূমিজের হলেও এই উৎসব এখন সার্বজনীন। পঞ্চগড়ের সবশ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে এই উৎসব ঘিরে আগ্রহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে।
নাট্যকার নির্দেশক সরকার হায়দার জানান, নাট্য উৎসব শিরোনামে আয়োজিত হলেও এটা মূলত সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত হতে যাচ্ছে। কারণ ৭ দিন ব্যাপি শুধু নাটকের আয়োজনই নয় শিল্প সংস্কৃতির অন্যান্য মাধ্যমগুলোকেও উদযাপিত হবে। আর্ট ক্যাম্প, সাহিত্য আড্ডা, থিয়েটার ক্যাম্প, শিশুদের অংশ গ্রহণে নাট্য কর্মশালা, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, খাদ্য উৎসব। উৎসবের মধ্যে প্রতিদিন স্থানীয় শিশু ও নাট্যকর্মীদেরকে অভিনয় প্রশিক্ষণ দেবেন দেশ বিদেশের বরেণ্য নাট্যকার নির্দেশকরা। ফলে বিভিন্ন দেশের অভিনয় ও শিল্প, সাহিত্যের সঙ্গে এই এলাকার তথা বাংলাদেশের শিল্প সাহিত্যের মেলবন্ধন ঘটবে।
উৎসবে ভারতের ২টি , নেপালের ২টি এবং বাংলাদেশের ৪টি নাট্যদল অংশ নিচ্ছে। উৎসব পরিচালনা কমিটি জানিয়েছে আগামী ৯ অক্টোবর উদ্বোধনী দিনে নেপালের কালচারাল কর্পোরেশন পরিবেশন করবে 'ধন বাহাদুর ওলির রচনা' এবং বীরেন্দ্র হামালের নির্দেশনায় 'বে অফ বেঙ্গল ভার্সেস হিমালয়', ১০ অক্টোবর কলকাতার নিহারিকা নাট্যদল পরিবেশন করবে শ্যামসুন্দর বসুর রচনা এবং অশীম কর্মকারের নির্দেশনায় 'বিষয়ের বিশ', ১১ তারিখে সম্বিত সাহার রচনা নির্দেশনায় দিনাজপুরের শিল্পনাট পরিবেশন করবে 'রক্ত গোলাপের ছবি', ১২ অক্টোবর পুরু লামসালের রচনা নির্দেশনায় নেপালের নাট্যদল আদিত্যাদি পরিবেশন করবে 'নাওগেডি'।
১৩ অক্টোবর সরকার হায়দারের রচনা ও নির্দেশনায় ভূমিজ পরিবেশন করবে শাহনাজ এবং ১৪ অক্টোবর শিলিগুড়ির প্যাশোয়েনেট পারফর্মার্স অমিতাভ কাঞ্জিলালের নির্দেশনায় পরিবেশন করবে গিরিশ কার্নাডের তুঘলক, ১৫ অক্টোবর ঢাকার শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্র পরিবেশন করবে রওশন জান্নাত রুশনীর রচনা নির্দেশনায় 'বীরাঙ্গনার বয়ান'। একই দিনে পঞ্চগড়ের নাট্যদল দিশারী নাট্যগোষ্ঠী পরিবেশন করবে রফিকুল ইসলামের নির্দেশনায় সেলিম আলদীনের নাটক 'বাসন', ১৬ অক্টোবর পরিবেশিত হবে আশিষ খন্দকারের রচনা ও নির্দেশনায় ঢাকার নাট্যদল স্পেস এন্ড এ্যাকটিং রিসার্চ সেন্টারের নাটক দুই 'আগুন্তক ভার্সেস একটি করবী ফুল'।
নাটক পরিবেশনা ছাড়াও প্রতিদিন বিকেলে তিন দেশের শিল্প সাহিত্য নিয়ে সেমিনার, আলোচনা, কয়েকটি জেলার চিত্রশিল্পীদের অংশগ্রহণে আর্ট ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হবে। এসব আয়োজনে তিন দেশের বরেণ্য ব্যক্তিত্বরা আলোচনা করবেন। এছাড়া সারাদেশের ২০ জন নাট্যকর্মীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হবে থিয়েটার ক্যাম্প।
স্থানীয় ১০টি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং ৪টি নাট্য সংগঠনের নাট্য কর্মীরা প্রতিদিন অভিনয় কর্মশালায় অংশ নেবে। উৎসবের সময় পঞ্চগড়ে সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান করবে আয়োজক নাট্যদল ভূমিজ। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এই উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।
পঞ্চগড় সাহিত্যপরিষদের সভাপতি আরিফুল ইসলাম পল্লব জানান, উৎসবটি উদযাপন করার জন্য আমরা প্রস্তুতি শেষ করেছি। এখন উদ্বোধনের পালা।
দীশারী নাট্যগোষ্ঠীর পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, এই উৎসবটি পঞ্চগড়ের মানুষের জন্য এটি সার্বজনীন উৎসব। দর্শক, নাট্যকর্মী, শিল্পী, সাহিত্যিকদের জন্য এই উৎসব অন্যরকম অভিজ্ঞতার হবে বলে আমরা আশা করছি।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা