টাঙ্গাইলের মধুপুরে বিরল রোগে আক্রান্ত মো. আব্দুল হাই ওরফে আদু (২০)। সে উপজেলার মহিষমারা ইউনিয়নের শালিকা গ্রামের মো. নূরুল ইসলামের মেজছেলে। ভালো নাম আব্দুল হাই হলেও গ্রামের সবাই তাকে আদু বলেই ডাকেন।
আদুর বাম চোখের উপর হতে গাল বেয়ে এমনভাবে মাংস ঝুলে পড়েছে। অচেনা কেউ আদুকে দেখলেই ভয়ে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। আদু বাড়ির পাশে মনোহরী দোকান দিয়ে বসেছে। সে যে জায়গায় বসে দোকান করে স্থানীয়রা তার নামানুসারেই সে জায়গার নাম দিয়েছেন আদুর মোড়।
মঙ্গলবার সরেজমিনে আদুর মোড়ে গিয়ে কথা হয় তার বাবার সাথে। আদুর বাবা নূরুল ইসলাম জানান, জন্মের পর ভালোই ছিল আদু। কিন্তু পাঁচ বছর পর হঠাৎ করে ওর বাম চোখে চুলকানি হয়। চোখ দিয়ে পানি পড়ে। মধুপুর নিয়ে হোমিও ওষুধ খাওয়ালে কয়েকদিন পর আক্রান্ত চোখ ফেঁটে রক্ত পড়া শুরু করে।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয় আদুকে। টানা একমাস চিকিৎসার পর তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। অস্বচ্ছল পরিবার হওয়ায় আর চিকিৎসা করানো হয়নি আদুকে। ওর ৭-৮ বছর বয়স থেকে আস্তে আস্তে চোখ ঢেকে মাংস ঝুলে পড়তে থাকে। ক্রমে মুখের বামপাশের পুরোটাই বিকৃতি হয়ে যায়। অবশেষে চিকিৎসা ছেড়েই দেন দরিদ্র পিতা-মাতা। প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা ও মনোহরী দোকানের সামান্য আয় দিয়েই চলে আদুর সংসার।
আদু জানায়, বাহিরে বের হলে লোকজনের মাঝে বিব্রত হতে হয় তাকে। তার ডান পাও ভেঙ্গে পুঙ্গ হয়ে গেছে। লাঠিতে ভর করেই চলতে হয় তাকে। বড় ভাই বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছে। ছোট বোনকে পড়াশোনা করাচ্ছেন এভাবেই। আক্রান্তস্থানে কোন প্রকার ব্যাথা করে না, তবে মাঝে মাঝে বাম চোখ দিয়ে পানি ঝরে।
পার্শ্ববতী বেতবাড়ী গ্রামের কাঠমিস্ত্রী মো. ফারুক আহম্মেদ জানান, ভালো চিকিৎসা করাতে পারলে হয়তো আদু ভালো হয়ে যেত। তার পরিবারের পক্ষে উন্নত চিকিৎসা করানোর সামর্থ নেই।
চাপড়ি বাজারের গণেশ জুয়েলার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুব্রত কর্মকার জানান, বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিবন্ধী হলেও সে ভিক্ষাবৃত্তি না করে কাজ করে খাচ্ছে। এটা খুব ভালো।
মহিষমারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী আব্দুল মোতালেব জানান, বিরল রোগে আক্রান্ত আদুকে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। উন্নত চিকিৎসা পেলে হয়তো ভালো হয়ে যাবে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার