রাত ঠিক ১১টা। গ্রামের লোকজন লাঠি, বল্লম, বাঁশি, চার্জলাইট নিয়ে এক এক করে আসতে শুরু করে। দলে দলে বিভক্ত হয়ে গ্রামের প্রবেশ পথসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে শুরু করছেন পাহারা দেওয়ার কাজ। গ্রামের ভিতরে অপরিচিত কাউকে দেখলেই তাকে ঘিরে ফেলছে তারা। হাতে লাঠি আর মুখে বাঁশির শব্দে তারা ও আতংক হয়ে উঠছেন। শুরু হয় তাদের প্রশ্ন করা। অপরিচিত হলে লিখে রাখছেন তাদের নাম ও ঠিকানা।
প্রতিরাতেই এমন চিত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর এলাকা ও উত্তর ইউনিয়নসহ প্রতিটি ইউনিয়নের গ্রামে গ্রামে। এমন দৃশ্য দেখা যায়।
গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায়, গত ১ সপ্তাহে পূর্বে পৌর এলাকার দুর্গাপুর মো. নূর মিয়ার বাড়ি ও এর একদিন আগে উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের চানপুর গ্রামে জলিল মিয়ার বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। সংঘবদ্ধ ডাকাতরা অভিনব কায়দায় কলাপসিবল গেইটের তালা এবং ঘরের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে অস্ত্রের মুখে পরিবারের সদস্যদেরকে জিম্মি করে নগদ টাকা স্বর্ণালংকার মোবাইলসহ অন্তত ১৪ লাখ টাকার মালামাল লুটে নেয়। তাছাড়া প্রতি রাতে এই ইউনিয়নের কোন না কোন স্থানে ডাকাতরা হানা দিচ্ছে। গ্রামের মধ্যে ডাকাতি আতংক ছড়িয়ে পড়ে।
গ্রামে চুরি আতংক বিরাজ করায় বাধ্যহয়ে জানমাল রক্ষার্থে লোকজন চুরি, ডাকাতির রোধে সভা করে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রতিরাতে দল বেঁধে পাহারা দেওয়া শুরু করেছেন।
উত্তর ইউনিয়নের আজমপুর, চানপুর, আমোদাবাদ, রামধননগর ও পৌর শহরের দুর্গাপুর, চাঁনপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায় সাধারণ মানুষের মাঝে এক প্রকার আতংক বিরাজ করছে। গ্রামবাসীর সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে চুরি ডাকাতি রোধে পাহারা দেওয়ার কাজে ছাত্র, যুবক, ব্যবসায়ী, শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন ছুটে আসছেন।
দলে দলে বিভক্ত হয়ে লাঠি, বাঁশি নিয়ে রাস্তায় ঘুরা ফেরা করছেন। প্রতিটি দলে থাকছে ১০-১২ জন সদস্য। রাত ১১টা থেকে ভোর ৪টা পযর্ন্ত চলে পাহারা দেওয়ার কাজ। গ্রামে চুরি ডাকাতির খবর পাওয়া মাত্র হৈ হুল্লোড় শুরু হয়ে যায়।
চানপুর গ্রামের প্রবাসীর স্ত্রী শামীমা আক্তার বলেন, চুরি ডাকাতি বৃদ্ধি পাওয়ায় রাতে ঘুম হতো না। সন্ধ্যা হলেই আতংকে থাকতাম। গ্রামের লোকজন রাত জেগে পাহারা দেওয়ায় এখন আর আতংক নেই। সেই সাথে গ্রামবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসতে শুরু করেছে বলে জানায়।
আখাউড়া উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. আব্দুস সাত্তার বলেন, গত একমাসের ব্যবধানে আমাদের এলাকায় বেশ কয়েকটি বাড়িতে চুরি-ডাকাতি হয়েছে। এতে এলাকাবাসীর মনে চুরি-ডাকাতির আতঙ্ক বিরাজ করছে।
আখাউড়া পৌরশহরের ১নং ওয়াড কাউন্সিলর মো.তাজুল ইসলাম বলেন, চুরি ডাকাতির ভয়ে রাত দশটা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত পাহারা দেওয়া হয়। ৫০-৬০ যুবক ৫/৬টি টিমে ভাগ হয়ে পাহাড়া দেয়।
আখাউড়া উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান ভূইয়া স্বপন বলেন, চুরি ডাকতি রোধে ইউপি সদস্য, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গসহ গ্রামের লোকদেরকে নিয়ে বৈঠক করে রাত জেগে পাহারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। স্থানীয় প্রশাসনকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।
আখাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রসুল আহমেদ নিজামী বলেন, আমি মাত্র সপ্তাহখানেক আগে এ থানায় যোগদান করেছি। চুরি-ডাকাতি, মাদক চোরাচালান প্রতিরোধে এলাকার জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি সভা করেছি। তাছাড়া চুরি-ডাকাতি রোধে পুলিশও দায়িত্ব পালন করছে।
বিডি-প্রতিদিন/১২ মার্চ, ২০১৯/মাহবুব